পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᎼᏔ% রবীন্দ্র-রচনাবলী মাঝে মাঝে যেন চেনা-চেনা-মতো মনে হয় থেকে থেকেনিমেষ ফেলিতে দেখিতে না পাই কোথা পথ যায় বেঁকে । মনে হল মেঘ, মনে হল পাখি, মনে হল কিশলয়, ভালো করে যেই দেখিবারে যাই মনে হল কিছু নয়। দুই ধারে এ কি প্রাসাদের সারি ? অথবা তরুর মূল ? অথবা এ শুধু আকাশ জুড়িয়া আমারি মনের ভুল ? মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি রমণীর অবগুষ্ঠিত মুখে— নীরব নিদয় বসিয়া রয়েছে, প্রাণ কেঁপে ওঠে বুকে । ভয়ে ভুলে যাই দেবতার নাম, মুখে কথা নাহি ফুটে ; হুহু রবে বায়ু বাজে দুই কানে ঘোড় চলে যায় ছুটে । চন্দ্র যখন অস্তে নামিল তখনো রয়েছে রাতি, পূর্বদিকের অলস নয়নে মেলিছে রক্ত ভাতি। জনহীন এক সিন্ধুপুলিনে অশ্ব থামিল আসি— সমুখে দাড়ায়ে কৃষ্ণ শৈল গুহামুগ্ধ পরকাশি। সাগরে না শুনি জলকলরব, না গাহে উষার পাখি, বহিল না মৃদ্ধ প্রভাতপবন বনের গন্ধ মাখি । অশ্ব হইতে নামিল রমণী, আমিও নামিনু নীচে, আঁধার-ব্যাদান গুহার মাঝারে চলিহ্ তাহার পিছে। ভিতরে খোদিত উদার প্রাসাদ শিলাস্তম্ভ'পরে, কনকশিকলে সোনার প্রদীপ দুলিতেছে থরে থরে । ভিত্তির গায়ে পাষাণমূর্তি চিত্রিত আছে কত, অপরূপ পাখি, অপরূপ নারী, লতাপাত নানা-মতে । মাঝখানে আছে চাঁদোয় খাটানো, মুক্ত কালরে গাথা— তারি তলে মণিপালঙ্ক’পরে আমল শয়ন পাত । তারি দুই ধারে ধূপাধার হতে উঠিছে গন্ধধূপ, সিংহবাহিনী নারীর প্রতিম দুই পাশে অপরূপ। নাহি কোনো লোক, নাহিকে প্রহরী, নাহি হেরি দাসদাসী । গুন্থাগৃহতলে তিলেক শব্দ হয়ে উঠে রাশি রাশি।