পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রজাপতির নির্বন্ধ २8१ বিষয়কৰ্মে চন্দ্রমাধববাবুর মতো অপটু কেহ নাই কিন্তু তাহার মনের খেয়াল বাণিজ্যের দিকে। তিনি বলিলেন, “আমাদের প্রথম কর্তব্য ভারতবর্ষের দারিদ্র্যমোচন, এবং তার অtশু উপায় বাণিজ্য । আমরা কয়জনে বড়ো বাণিজ্য চালাতে পারিনে, কিন্তু তার সূত্রপাত করতে পারি। মনে করে আমরা সকলেই যদি দিয়াশালাই সম্বন্ধে পরীক্ষণ আরম্ভ করি । এমন যদি একটা কাঠি বের করতে পারি বা সহজে জলে, শীঘ্র নেবে না এবং দেশের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তা হলে দেশে সস্তা দেশালাই -নির্মাণের কোনো বাধা থাকে না।” এই বলিয়া জাপানে এবং যুরোপে সবসুদ্ধ কত দেশালাই প্রস্তুত হয়, তাহাতে কোন কোন কাঠের কাঠ ব্যবহার হয়, কাঠির সঙ্গে কী কী দাহ পদার্থ মিশ্রিত করে, কোথা হইতে কত দেশালাই রপ্তানি হয়, তাহার মধ্যে কত ভারতবর্ষে আসে এবং তাহার মূল্য কত চন্দ্রমাধববাবু তাহা বিস্তারিত করিয়া বলিলেন । s বিপিন ত্রশ নিন্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। পূর্ণ কহিল, “পাকাটি এবং খ্যাংরা কাঠি দিয়ে শীঘ্রই পরীক্ষা করে দেখব ।” ঐশ মুখ ফিরাইয়া হাসিল । এমন সময়ে ঘরের মধ্যে অক্ষয় আসিয়া প্রবেশ করিলেন। কহিলেন, "মশায়, প্রবেশ করতে পারি ?” & ক্ষীণদৃষ্টি চন্দ্রমাধববাৰু হঠাং চিনিতে না পারিয়া ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া অবাক হইয়া চাহিয়া রহিলেন । অক্ষয় কহিলেন, “মশায়, ভয় পাবেন না এবং অমন ভ্ৰকুটি করে আমাকেও ভয় দেখাবেন না— আমি অভূতপূর্ব নই– এমন-কি, আমি আপনাদেরই ভূতপূর্ব— আমার নাম—” চন্দ্রমাধববাবু তাড়াতাড়ি উঠিয়া কহিলেন, “আর নাম বলতে হবে না— আস্থন আম্বন অক্ষয়বাৰু—” তিন তরুণ সভ্য অক্ষয়কে নমস্কার করিল। বিপিন ও ঐশ দুই বন্ধু সস্তোবিবাদের বিমর্ষতায় গভীর হইয়া বসিয়া রহিল। পূর্ণ কহিল, "মশায়, অভূতপূর্বর চেয়ে ভূতপূর্বকেই বেশি ভয় হয় ।” অক্ষয় কহিলেন, “পূর্ণবাবু বুদ্ধিমানের মতে কথাই বলেছেন। সংসারে ভূতের ভয়টাই প্রচলিত। নিজে ষে ব্যক্তি ভূত অন্তলোকের জীবনসভোগটা তার কাছে বাঞ্ছনীয় হতে পারেই না, এই মনে করে মাস্থ্য ভূতকে ভয়ংকর কল্পনা করে। অতএব সভাপতিমশায়, চিরকুমার সভার ভূতটিকে সভা থেকে বাড়াবেন না পূর্ব-সম্পর্কের মমতাবশত একখান চৌকি দেবেন, এইবেল বলুন।” o :