পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२bre রবীন্দ্র-রচনাবলী পথে আসিতে আসিতে দুই বন্ধুর মধ্যে কোনো কথাই হয় নাই। এখানে আসিয়া ঘরে প্রবেশ না করিতেই ষে শব্দগুলি শোনা গেল, অন্ত কোনো দিন হইলে শ্ৰীশ তাহা লক্ষ্য করিত কি না সন্দেহ– আজ তাহার কাছে কিছুই এড়াইল না । অনতিপূর্বেই ঘরের মধ্যে রমণীদল যে ছিল, ঘরে প্রবেশ করিয়াই সে তাহ বুঝিতে পারিল । অক্ষয় চলিয়া গেলে ঘরটি ঐশ ভালো করিয়া দেখিয়া লইল । টেবিলের মাঝখানে ফুলদানিতে ফুল সাজানো। সেটা চকিতে তাহাকে একটু যেন বিচলিত করিল। তাহার একটা কারণ ঐশ অত্যন্ত ফুল ভালোবাসে, তাহার আর একটা কারণ ঐশ কল্পনাচক্ষে দেখিতে পাইল— অনতিকাল পূর্বেই যাহাদের স্বনিপুণ দক্ষিণ হস্ত এই ফুলগুলি সাজাইয়াছে তাহারাই এখনি ত্ৰস্তপদে ঘর হইতে পলাইয়া গেল । বিপিন ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “ষা বল ভাই, এ ঘরটি চিরকুমার-সভার উপযুক্ত নয়।” 曼 হঠাৎ মৌনভঙ্গে শ্ৰীশ চকিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “কেন নয় ?” বিপিন কহিল, “ঘরের সজ্জাগুলি তোমার নবীন সন্ন্যাসীদের পক্ষেও যেন বেশি বোধ হচ্ছে ।” ঐশ। আমার সন্ন্যাসধর্মের পক্ষে বেশি কিছুই হতে পারে না। বিপিন। কেবল নারী ছাড়া ! শ্ৰীশ কহিল, “হা, ওই একটি মাত্র !” –লেখকের অনুমানমাত্র হইতে পারে, কিন্তু অন্তদিনের মতে কথাটায় তেমন জোর পৌছিল না। বিপিন কহিল, "দেয়ালের ছবি এবং অন্যান্ত পাচ রকমে এ ঘরটিতে সেই নারীজাতির অনেকগুলি পরিচয় পাওয়া যায় যেন ।” শ্ৰীশ। সংসারে নারীজাতির পরিচয় তো সর্বত্রই আছে। বিপিন । তা তো বটেই। কবিদের কথা যদি বিশ্বাস করা যায় তা হলে চাদে ফুলে লতায় পাতায় কোনোখানেই নারীজাতির পরিচয় থেকে হতভাগ্য পুরুষমানুষের নিষ্কৃতি পাবার জো নেই। i শ্ৰীশ হাসিয়া কহিল, “কেৰল ভেবেছিলুম, চন্দ্রবাবুর বাসার সেই একতলার ঘরটিতে রমণীর কোনো সংস্রব ছিল না। আজ সে ভ্রমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। নাং, ওরা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে।” বিপিন। বেচারা চিরকুমার কাটর জন্তে একটা কোণও ফঁাকা রাখে নি। সভা করবার জায়গা পাওয়াই দায়।