পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8te রবীন্দ্র-রচনাবলী খাকৃ-রচয়িতা ঋষি ছন্দে মন্ত্ররচনা করিয়া গিয়াছেন, এই মন্দিরও পাথরের মন্ত্ৰ ; হৃদয়ের কথা দৃষ্টিগোচর হইয়া আকাশ জুড়িয়া দাড়াইয়াছে। মানুষের হৃদয় এখানে কী কথা গাথিয়াছে ? ভক্তি কী রহস্ত প্রকাশ করিয়াছে ? মাস্থ্য অনন্তের মধ্য হইতে আপন অস্তঃকরণে এমন কী বাণী পাইয়াছিল যাহার প্রকাশের প্রকাও চেষ্টায় এই শৈলপদমূলে বিস্তীর্ণ প্রান্তর আকীর্ণ হইয়। রহিয়াছে। এই-যে শতাধিক দেবালয়— যাহার অনেকগুলিতেই আজ আর সন্ধ্যারতির দীপ জলে না, শম্বঘণ্টা নীরব, যাহার ক্ষোদিত প্রস্তরখণ্ডগুলি ধূলিলুষ্ঠিত— ইহার কোনো একজন ব্যক্তিবিশেষের কল্পনাকে আকার দিবার চেষ্টা করে নাই । ইহার তখনকার সেই অজ্ঞাত যুগের ভাষাভারে আক্রাস্ত। যখন ভারতবর্ষের জীর্ণ বৌদ্ধধর্ম নবভূমিষ্ঠ হিন্দুধর্মের মধ্যে দেহান্তর লাভ করিতেছে, তখনকার সেই নবজীবনোচ্ছাসের তরঙ্গলীলা এই প্রস্তরপুঞ্জে আবদ্ধ হইয়া ভারতবর্ষের এক প্রাস্তে যুগান্তরের জাগ্রত মানবহৃদয়ের বিপুল কলধ্বনিকে আজ সহস্ৰ বৎসর পরে নিঃশব্দ ইঙ্গিতে ব্যক্ত করিতেছে। ইহা কোনো-একটি প্রাচীন নবযুগের মহাকাব্যের কয়েকখও ছিন্ন পত্র । এই দেবালয়শ্রেণী তাহার নিগৃঢ়নিহিত নিস্তৰ চিত্তশক্তির দ্বারা দর্শকের অস্তঃকরণকে সহসা যে ভাবান্দোলনে উদবোধিত করিয়া তুলিল তাহার আকস্মিকতা, তাহার সমগ্রতা, তাহার বিপুলত, তাহার অপূর্বত প্রবন্ধে প্রকাশ করা কঠিন— বিশ্লেষণ করিয়া খণ্ড খণ্ড করিয়া বলিবার চেষ্টা করিতে হইবে। মামুষের ভাষা এইখানে পাথরের কাছে হার মানে— পাথরকে পরে পরে বাক্য গাথিতে হয় না, সে স্পষ্ট কিছু বলে না, কিন্তু যাহ-কিছু বলে সমস্ত একসঙ্গে বলে— এক পলকেই সে সমস্ত মনকে অধিকার করে— স্বতরাং মন যে কী বুঝিল, কী শুনিল, কী পাইল, তাহ ভাবে বুঝিলেও ভাষায় বুঝিতে সময় পায় না— অবশেষে স্থির হইয়া ক্রমে ক্রমে তাহাকে নিজের কথায় বুঝিয়া লইতে হয়। দেখিলাম মন্দিরভিত্তির সর্বাঙ্গে ছবি খোদা। কোথাও অবকাশমাত্র নাই। যেখানে চোখ পড়ে এবং যেখানে চোখ পড়ে না, সর্বত্রই শিল্পীর নিরলস চেষ্টা কাজ করিয়াছে। *. ছবিগুলি বিশেষভাবে পৌরাণিক ছবি নয়, দশ অবতারের লীলা বা স্বৰ্গলোকের দেবকাহিনীই যে দেবালয়ের গায়ে লিখিত হইয়াছে তাও বলিতে পারি না। মানুষের ছোটোবড়ে ভালোমন্দ প্রতিদিনের ঘটনা—তাহার খেলা ও কাজ, যুদ্ধ ও