পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা 4 yo নির্বাচন করিতে পারিয়াছিলেন। এ সময়ে ধৈর্থরক্ষা করা যায় কি ? আজিকার কালে আমরা তো ধৈর্ব কাহাকে বলে জানিই না। কিন্তু রামমোহন রায়ের কী অসামান্ত ধৈৰ্যই ছিল । তিনি আর-সমস্ত ফেলিয়া পর্বতপ্রমাণ কৃপাকার ভশ্বের মধ্যে আচ্ছন্ন যে অগ্নি, ফু দিয়া দিয়া তাহাকেই প্ৰজলিত করিতে চাহিয়াছিলেন ; তাড়তাড়ি চমক লাগাইবার জন্ত বিদেশী দেশলাইকাঠি জালাইয়া জাদুগিরি করিতে চাহেন নাই । তিনি জানিতেন, ভস্মের মধ্যে যে অগ্নিকণিকা অবশিষ্ট আছে তাহা ভারতবাসীর হৃদয়ের গুঢ় অভ্যস্তরে নিহিত, সে অগ্নি প্ৰজলিত হইয়া উঠিলে সে আর নিভিবে না। এত বল এত ধৈর্য নহিলে তিনি রাজা কিসের ? দিল্লির সম্রাট তাহাকে রাজোপাধি দিয়াছেন, কিন্তু দিল্লির সম্রাটের সম্রাট তাহাকে রাজা করিয়া পাঠাইয়াছেন। ভারতবর্ষে বঙ্গসমাজের মধ্যে তিনি র্তাহার রাজসিংহাসন প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। তবে আমরা কি তাহাকে সম্মান করিব না ? রামমোহন রায় যখন ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেন তখন এখানে চতুর্দিকে কালরাত্রির অন্ধকার বিরাজ করিতেছিল। আকাশে মৃত্যু বিচরণ করিতেছিল। মিথ্যা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে তাহাকে সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল। মিথ্যা ও মৃত্যু নামক মায়াবী রাজাদের প্রকৃত বল নাই, অমোঘ অস্ত্র নাই, কোথাও তাহদের দাড়াইবার স্থল নাই, কেবল নিশীথের অন্ধকার ও একপ্রকার অনির্দেশু বিভীষিকার উপরে তাহাদের সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত। আমাদের অজ্ঞান— আমাদের হৃদয়ের দুর্বলতাই তাহাদের বল। অতি বড়ো ভীরুও প্রভাতের আলোকে প্রেতের নাম শুনিলে হাসিতে পারে, কিন্তু অন্ধকার নিশীথিনীতে একটি শুষ্ক পত্রের শব্দ একটি তৃণের ছায়াও অবসর পাইয়া আমাদের হৃদয়ে নিষ্ঠুর আধিপত্য করিতে থাকে। যথার্থ দস্থ্যভয় অপেক্ষ সেই মিথ্যা অনির্দেশু ভয়ের শাসন প্রবলতর । অজ্ঞানের মধ্যে মাহুষ যেমন নিরুপায়, যেমন অসহায়, এমন আর কোথায় ? রামমোহন রায় যখন জাগ্রত হইয়া বঙ্গসমাজের চারি দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন তখন বঙ্গসমাজ সেই প্ৰেতভূমি ছিল। তখন শ্মশানস্থলে প্রাচীনকালের জীবন্ত হিন্দুধর্মের প্রেতমাত্র রাজত্ব করিতেছিল। তাহার জীবন নাই, অস্তিত্ব নাই, কেবল অনুশাসন ও ভয় আছে মাত্র। সেই নিশীথে, শ্মশানে, সেই ভয়ের বিপক্ষে ‘মা ভৈঃ’ শব্দ উচ্চারণ করিয়া যিনি একাকী অগ্রসর হইয়াছিলেন তাহার মাহাত্ম্য আমরা আজিকার এই দিনের জালোকে হয়তো ঠিক অহুভব করিতে পারিব না। ষে ব্যক্তি সৰ্পৰৰ করিতে অগ্রসর হয় তাহার কেবলমাত্র জীবনের আশঙ্ক থাকে, কিন্তু ষে ব্যক্তি বাভলপ