পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা । (t:3 করিবেন। সন্নিকটবর্তী মহাত্মাকে সমগ্রভাবে সম্পূর্ণভাবে দেখিবার অবসর জাষ্ট্ৰীয়দের প্রায় ঘটে না । সংসারের সম্বন্ধ— বিচিত্র সম্বন্ধ, বিচিত্র স্বার্থ, বিচিত্র মত, বিচিত্র প্রবৃত্তি— ইহার -দ্বারা বিচারশক্তির বিশুদ্ধত রক্ষা করা কঠিন হয়, ছোটো জিনিস বড়ো হইয়া উঠে, অনিত্য জিনিস নিত্য জিনিসকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখে, সংসারের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে প্রকৃত পরিচয় প্রত্যহ খণ্ডিত হইয়া যায়। এইজন্তই পিতৃদেবের এই জন্মদিনের উৎসব তাহার আত্মীয়দের পক্ষে একটি বিশেষ শুভ অবসর। যে পরিমাণ দূরে দাড়াইলে মহত্বকে আদ্যোপাস্ত অথও দেখিতে পাওয়া যায়, অস্তকার এই উৎসবের স্বৰোগে বাহিরের ভক্তমণ্ডলীর সহিত একাসনে বসিয়া আমরা সেই পরিমাণ দূরে আসিব, তাহাকে ক্ষুদ্র সংসারের সমস্ত তুচ্ছ সম্বন্ধজাল হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখিব, আমাদের সংকীর্ণ জীবনের প্রাত্যহিক ব্যবহারোংক্ষিপ্ত সমস্ত ধূলিরাশিকে অপসারিত করিয়া তাহাকে বৃহৎ আকাশের মধ্যে, নির্মল শাস্তির মধ্যে, দেবপ্রসাদের অক্ষুণ্ণ আনন্দরশ্মির মধ্যে, তাহার যথার্থ মহিমায় তাহাকে তাহার জীবনের নিত্যপ্রতিষ্ঠার উপরে সমাসীন দেখিব। সংসারের আবর্তে উদভ্ৰান্ত হইয়া যত বিদ্রোহ, যত চপলত, ষত অষ্ঠায় করিয়াছি, অদ্য তাহার জন্য র্তাহার শ্রীচরণে একান্তচিত্তে ক্ষমাপ্রার্থনা করিব— আজ র্তাহাকে আমাদের সংসারের, আমাদের সর্বজনের, অতীত করিয়া তাহাকে বিশ্বভুবনের ও বিশ্বভুবনেশ্বরের সহিত বৃহৎ নিত্যসম্বন্ধে যুক্ত করিয়া দেখিব এবং তাহার নিকট এই আশীর্বাদ প্রার্থনা করিব যে, যে চিরজীবনের ধনকে তিনি নিজের জীবনের মধ্যে সঞ্চিত করিয়াছেন সেই সঞ্চয়কেই যেন আমরা সর্বপ্রধান পৈতৃক সম্পত্তি বলিয়া গণ্য করি, তাহার জীবনের দৃষ্টান্ত যেন আমাদিগকে ধনসম্পদের অন্ধত হইতে রক্ষা করে, বিপদের বিভীষিকা হইতে উদ্ধার করে, বিশ্বাসের দৃঢ়তার মধ্যে আমাদিগকে ধারণ করিয়া রাখে এবং তিনি ঋষিদের যে মন্ত্র আমাদের কর্ণে ধ্বনিত করিয়াছেন, তাহ যেন কোনো আরামের জড়ত্বে, কোনো নৈরাপ্তের অবসাদে বিশ্বত ब एहे- 曾 মাহং ব্রহ্ম নিরাকুর্বাং মা মা ব্ৰহ্ম নিরাকরোৎ । অনিরাকরণমত্ত অনিরাকরণং মেহন্ত । বন্ধুগণ, ভ্রাতৃগণ, এই সপ্তাশীতিবর্ষীয় জীবনের সম্মুখে দাড়াইয়া আনন্দিত হও, আশান্বিত হও । ইহা জানো যে, সত্যমেব জয়তে নামৃতম্। ইহা জানো যে, ধর্মই ধর্মের সার্থকতা। ইহা জানো যে, আমরা যাহাকে সম্পদ বলিয়া উন্মত্ত হই তাহ সম্পদ নহে, বাহাকে বিপদ বলিয়া ভীত হই তাহা বিপদ নহে ; আমাদের অন্তরাজু, সম্পদবিপদের অতীত যে পরম শান্তি তাহাকে আশ্রয় করিবার অধিকারী। ভূম