পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক । · VO(ሱ (፩ চন্দ্র। মনোঞ্জে, আদ্য অন্তঃপুরে দেবীগণ ভর্তৃপ্ৰসাদনব্রতে র্তাহাদের এই সেবক ধমকে স্মরণ করিয়াছেন, অতএব যদি অনুমতি হয় তবে, হে হরিণশালীননয়নে শীতলা। কী বললে ? শালী ? তা ভাই, তাই সই। তোমার চাদমুখে সবই মিষ্টি লাগে। তা, শালী যদি বললে তবে কানমলাটিও খাও । চন্দ্রের পার্থে একাসনে বসিয়া চন্দ্রের কৰ্ণপীড়ন ইন্দ্র। (চন্দ্রর প্রতি) ভগবান সিতািকরণমালিন, তুমিই ধন্য। করুণম্পর্শে তরুণীকরকিসলয়ের অরুণরাগ এখনো তোমার কর্ণমূলে সংলগ্ন হইয়া আছে। শীতলা । (মনসার প্রতি লক্ষ করিয়া স্বগত) মোলো মোলো! আমাদের মনসে হিংসেয় ফেটে । মোলো ! আমি চাদের পাশে বসেছি, এ আর ওঁর গায়ে সইল না। ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে দেখো-না ! এতগুলো পুরুষমানুষের সামনে লজ্জাও নেই! মাগী এবার পাড়ায় গিয়ে কত কানাঘুষোই করবে ! উনিও বড়ো কসুর করেন নি। কার্তিক-ঠাকুরটিকে নিয়ে যেরকম নিলজপনা করেছে। আমি দেখে লজ্জায় মরে যাই আর-কি। কার্তিক কোথায় নুকোবে ভেবে পায় না। ঐ তো চেহারা, ঐ নিয়ে এত ভঙ্গিও করে ! মাগো, মাগো, মাগো ! (প্রকাশ্যে) আমার মাগী ! চাদের সামনে দিয়ে অমন বেহায়ার মতো আনাগোনা করছিস কেন ? যেন সাপ খেলিয়ে বেড়াচ্ছে!! কীর্তিকের ওখানে ঠাই হল না নাকি ? সুরসভার মধ্যে মনসার ও শীতলার গ্রাম্য ভাষায় তুমুল কলহ ইন্দ্ৰ | (শশব্যস্ত হইয়া একবার মনসা ও একবার শীতলার প্রতি) ক্ৰোধ সংবরণ করে ! ক্রোধ সংকরণ করো ! অয়ি অসূয়াতাম্রলোচনে, অয়ি গলদবেণীবন্ধে, অয়ি বিগলিতদুকূলবসনে, আয়ি কোকিলজিতকৃজিতে, তারতর সপ্তম স্বরকে পঞ্চম স্বরে নম্র করিয়া আনাে। অয়ি কোপনে— ঘেটু । (উত্তরীয় ধরিয়া ইন্দ্রকে আসনে বসাইয়া) তুমি এত ব্যস্ত হও কেন দাদা ? ওদের এমন । রোজ হয়ে থাকে। থাকত ওলাবিবি, তা হলে আরো জমত। তার কি খাবার গােল হয়েছে তাই সে শচীর সঙ্গে ঝগড়া করতে গেছে । ইন্দ্র। (ব্যাকুলভাবে) হা সুরেন্দ্রবক্ষোবিহারিণী দেবী পীেলমী ! মনসার দ্রুতবেগে সভাত্যাগ এবং শীতলার পুনশ্চ চন্দ্রের পার্থে উপবেশন বীণাপাণির প্রবেশ বীণাপাণি । দেবরাজ, কর্কশ কোলাহলে আমার দেববীণার স্বরশ্বলন হইতেছে, আমার কমলবন শূন্যপ্রায়, আমি দেবলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করিলাম। [প্ৰস্থান বৃহস্পতি । আমিও জননী বাণীর অনুগমন করি । , [প্ৰস্থান অশ্লেষা ও মঘার সভাপ্রবেশ অশ্লেষা ও মঘা । (চান্দ্রের একাসনে শীতলাকে দেখিয়া) আজ অপরূপ অভিনব সপ্তদশ কলায় দেব শশধরকে সমধিকতর শোভমান দেখিতেছি। ! চন্দ্র । দেবীগণ, এই হতভাগ্যকে অকরুণ পরিহাসে বিড়ম্বিত করবেন না । পুরুষ রাহু আমাকে কেবল ক্ষণমাত্রকাল পরাভব করিতে পারে সেই আক্ৰোশে ঈর্ষান্বিত ভগবান একটি স্ত্রী রাহু সৃজন করিয়াছেন, ইহার পূর্ণগ্ৰাস হইতে আমি বহু চেষ্টায় আপনাকে মুক্ত করিতে পারিতেছি না। অশ্লেষা। আর্যপুত্র, এই ভদ্রললনা অনতিপূর্বে তোমার অন্তঃপুরে প্রবেশপূর্বক তোমার শ্বশুরকুলকে উধ্বতন চতুর্দশ পুরুষ পর্যন্ত অশ্রুতপূর্ব কুৎসা-দ্বারা লাঞ্ছিত করিয়া আসিয়াছেন। দেবীর সেই আশ্চর্য ব্যবহারকে আমরা অধিকারবহির্ভূত উপদ্রব জ্ঞান করিয়া বিস্ময়ান্বিত হইয়াছিলাম। এক্ষণে স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছি সৌভাগ্যবতী তোমারই হস্তে সেই অবমাননের অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছেন। এখন, আর্যপুত্রকে তঁহার নবতর শ্বশুরকুলে বরণ করিয়া আমরা নক্ষত্ৰলোক হইতে বিচ্যুতিলাভের জন্য চলিলাম। (শীতলার প্রতি) ভদ্রে, কল্যাণী, তােমার সৌভাগ্য অক্ষয় হউক। [প্ৰস্থান