পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ &9е হইয়া গেল। স্বদীর্ঘ রাত্রে সমস্তই ভূতের ব্যাপার বলিয়া মনে হইতেছিল, দিনের বেলা আরাকানের সৈন্তগণ আপনাদের অপমান স্পষ্ট অনুভব করিতে পারিল । চারিদিকে বড়ো বড়ো পাহাড় সূর্যালোকে সহস্রচক্ষু হইয়া তাহাদিগের দিকে তাকাইয়। নিঃশৰে দাড়াইয়া রহিল। রাজধর আরাকানপতিকে ৰহিলেন, “আর বিলম্ব নয়—শীঘ্ৰ যুদ্ধ নিবারণ করিবার এক আদেশপত্র আপনার সেনাপতির নিকট পাঠাইয়া দিন । ওপারে এতক্ষণে ঘোর যুদ্ধ বাধিয়া গেছে।” কতকগুলি সৈন্ত সহিত দূতের হস্তে আদেশপত্র পাঠানো হইল । অষ্টম পরিচ্ছেদ অতি প্রত্যুষেই অন্ধকার দূর হইতে না হইতেই যুবরাজ ও ইন্দ্রকুমার দুই ভাগে পশ্চিমে ও পূর্বে মগদিগকে আক্রমণ করিতে চলিয়াছেন। সৈন্তের অল্পত লইয়া রূপনারায়ণ হাজারি দুঃখ করিতেছিলেন—তিনি বলিতেছিলেন—আর পাচ হাজার লইয়া আসিলেই আর ভাবনা ছিল না । ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “ত্রিপুরারির অনুগ্রহ যদি হয় তবে এই কয় জন সৈন্য লইয়াই জিতিব, আর যদি না হয় তবে বিপদ আমাদের উপর দিয়াই যাক, ত্রিপুরাবাসী যত কম মরে ততই ভালো। কিন্তু হরের কৃপায় আজ আমরা জিতিবই।” এই বলিয়া হর হর বোম্ বোম্ রব তুলিয়া কৃপাণ বৰ্শ লইয়৷ ঘোড়ায় চড়িয়া বিপক্ষদের অভিমুখে ছুটিলেন–র্তাহার দীপ্ত উৎসাহ তাহার সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল । গ্রীষ্মকালে দক্ষিনা বাতাসে খড়ের চালের উপর দিয়া আগুন যেমন ছোটে র্তাহার সৈন্যেরা তেমনি ছুটিতে লাগিল। কেহই তাহাদের গতিরোধ করিতে পারিল না। বিপক্ষদের দক্ষিণ দিকের ব্যুহ ছিন্নভিন্ন হইয়া গেল। হাতাহাতি যুদ্ধ বাধিল । মানুষের মাথা ও দেহ কাটা-শস্যের মতো শস্তক্ষেত্রের উপর গিয়া পড়িতে লাগিল। ইন্দ্রকুমারের ঘোড়া কাটা পড়িল । তিনি মাটিতে পড়িয়া গেলেন। রব উঠিল তিনি মারা পড়িয়াছেন। কুঠারঘাতে এক মগ অশ্বারোহীকে অশ্বচু্যত করিয়া ইন্দ্রকুমার তৎক্ষণাৎ তাহার ঘোড়ার উপর চড়িয়া বলিলেন। রেকাবের উপর দাড়াইয়া তাহার রক্তাক্ত তলোয়ার আকাশে স্বর্যালোকে উঠাইয়া বজ্রস্বরে চীংকার করিয়া উঠিলেন, “হর হর বোম্বোম্ব।” যুদ্ধের আগুন দ্বিগুণ জলিয়া উঠিল। এই সকল ব্যাপার দেখিয়া মগদিগের বামদিকের ব্যুহের সৈন্তগণ আক্রমণের প্রতীক্ষা না করিয়া সহসা বাহির হইয়া যুবরাজের সৈন্তের উপর গিয়া পড়িল। যুবরাজের সৈন্তগণ সহসা এরূপ আক্রমণ প্রত্যাশা করে নাই। তাহারা মুহূর্তের মধ্যে বিশৃঙ্খল হইয়া পড়িল।