পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

मांख्रिनिट्कडन se» সমতল আর্বাবর্তের অরণ্যভূমিও ভারতবর্ষকে একটি বিশেষ স্বযোগ দিয়েছিল। ভারতবর্ষের বুদ্ধিকে সে জগতের অন্তরতম রহস্তলোঙ্গ আৰিষ্কারে প্রেরণ করেছিল। সেই মহাসমুদ্রতীরের নানা স্বদূর দ্বীপ-দ্বীপান্তর থেকে সে ষে-সমস্ত সম্পদ আহরণ করে এনেছিল, সমস্ত মানুষকেই দিনে দিনে তার প্রয়োজন স্বীকার করতেই হৰে । ৰে ওষধি-বনস্পতির মধ্যে প্রকৃতির প্রাণের ক্রিয়া দিনে রাত্রে ও ঋতুতে ঋতুতে প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে এবং প্রাণের লীলা নানা অপরূপ ভজিতে, ধ্বনিতে ও রূপবৈচিত্র্যে নিরস্তর নূতন নূতন ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে তারই মাঝখানে ধ্যানপরায়ণ চিত্ত নিয়ে যারা ছিলেন তারা নিজের চারিদিকেই একটি আনন্দময় রহস্তকে স্বম্পষ্ট উপলব্ধি করেছিলেন । সেইজন্তে র্তারা এত সহজে বলতে পেরেছিলেন, যদিদং কিঞ্চ সর্বং প্রাণ এজতি নিঃস্থতং, এই যা কিছু সমস্তই পরমপ্রাণ হতে নিঃস্থত হয়ে প্রাণের মধ্যেই কম্পিত হচ্ছে। তারা স্বরচিত ইটকাঠলোহার কঠিন খাচার মধ্যে ছিলেন না, তারা যেখানে বাস করতেন সেখানে বিশ্বব্যাপী বিরাট জীবনের সঙ্গে তাদের জীবনের অবারিত যোগ ছিল। এই বন তাদের ছায়া দিয়েছে, ফল ফুল দিয়েছে, কুশসমিং জুগিয়েছে, তাদের প্রতিদিনের সমস্ত কর্ম অবকাশ ও প্রয়োজনের সঙ্গে এই বনের আদানপ্রদানের জীবনময় সম্বন্ধ ছিল। এই উপায়েই নিজের জীবনকে তারা চারিদিকের একটি বড়ো জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে জানতে পেরেছিলেন। চতুর্দিককে তারা শূন্ত বলে, নিৰ্জীৰ বলে, পৃথক বলে জানতেন না। বিশ্বপ্রকৃতির ভিতর দিয়ে আলোক, বাতাস, অন্নজল প্রভৃতি যে-সমস্ত দান তারা গ্রহণ করেছিলেন সেই দানগুলি ষে মাটির নয়, গাছের নয়, শূন্ত আকাশের নয়, একটি চেতনাময় অনস্ত আনন্দের মধ্যেই তার মূল প্রস্রবণ, এইটি তারা একটি সহজ অনুভবের দ্বারা জানতে পেরেছিলেন । সেইজন্তেই নিশ্বাস আলো অন্নজল সমস্তই র্তারা শ্রদ্ধার সঙ্গে ভক্তির সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন । এইজন্তেই নিখিলচরাচরকে নিজের প্রাণের দ্বারা, চেতনার দ্বারা, হৃদয়ের দ্বারা, বোধের দ্বারা, নিজের আত্মার সঙ্গে আত্মীয়রূপে এক করে পাওয়াই ভারতবর্ষের পাওয়া । এর থেকেই বোঝা যাবে বন ভারতবর্ষের চিত্তকে নিজের নিভৃত ছায়ার মধ্যে নিগূঢ় প্রাণের মধ্যে কেমন করে পালন করেছে। ভারতবর্ষে যে দুই বড়ো বড়ো প্রাচীনযুগ চলে গেছে, বৈদিকযুগ ও বৌদ্ধযুগ, সেই দুই যুগকে বনই ধাত্রীরূপে ধারণ করেছে। কেবল বৈদিক ঋষিরা নন, ভগবান বুদ্ধও কত জাম্রবন, কত বেণুবনে তার উপদেশ বর্ষণ করেছেন। রাজপ্রাসাদে তার স্বান কুলোয় নি, বনই তাকে বুকে করে নিয়েছিল। . i.