পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মপরিচয় ܬܟܠܼ বিরোধের সাগর পার হওয়া, তা নয় । সেখানে তরী থেকে তীরে ওঠা । সেখানে যে আনন্দ সে তো । দুঃখের ঐকান্তিক নিবৃত্তিতে নয়, দুঃখের ঐকান্তিক চরিতার্থতায় । ধর্মবোধের এই-যে যাত্রা এর প্রথমে জীবন, তার পরে মৃত্যু, তার পরে অমৃত । মানুষ সেই অমৃতের অধিকার লাভ করেছে। কেননা জীবের মধ্যে মানুষই শ্রেয়ের ক্ষুরধার নিশিত দুৰ্গম পথে দুঃখকে মৃত্যুকে স্বীকার করেছে। সে সাবিত্রীর মতো যমের হাত থেকে আপনি সত্যকে ফিরিয়ে এনেছে। সে স্বৰ্গ থেকে মর্তলোকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তবেই অমৃতলোককে আপনার করতে পেরেছে। ধর্মই মানুষকে এই দ্বন্দ্বের তুফান পার করিয়ে দিয়ে এই অদ্বৈতে অমৃতে আনন্দে প্রেমে উত্তীৰ্ণ করিয়ে দেয়। যারা মনে করে তুফানকে এড়িয়ে পালানোই মুক্তি তারা পারে যাবে কী করে। সেইজন্যেই তো মানুষ প্রার্থনা করে, আসতো মা সদগময়, তমসো মা জ্যোতিৰ্গময়, মৃত্যোর্মামৃতং গময় । ‘গময় এই কথার মানে এই যে,-পথ পেরিয়ে যেতে হবে, পথ এড়িয়ে যাবার জো নেই। আমার রচনার মধ্যে যদি কোনো ধর্মতত্ত্ব থাকে। তবে সে হচ্ছে এই যে, পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার সেই পরিপূর্ণ প্রেমের সম্বন্ধ-উপলব্ধিই ধর্মবোধ যে প্রেমের এক দিকে দ্বৈত আর এক দিকে অদ্বৈত, এক দিকে বিচ্ছেদ আর-এক দিকে মিলন, এক দিকে বন্ধন আর-এক দিকে মুক্তি । যার মধ্যে শক্তি এবং সৌন্দর্য, রূপ এবং রস, সীমা এবং অসীম এক হয়ে গেছে ; যা বিশ্বকে স্বীকার করেই বিশ্বকে সত্যভাবে অতিক্রম করে এবং বিশ্বের অতীতকে স্বীকার করেই বিশ্বকে সত্যভাবে গ্রহণ করে ; যাযুদ্ধের মধ্যেও শাস্তকে মানে, মন্দের মধ্যেও কল্যাণকে জানে এবং বিচিত্রের মধ্যেও এককে পূজা করে । আমার ধর্ম যে আগমনীর গান গায় সে এই— ভেঙেছ দুয়ার, এসেছি জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয় । তোমারি হউক জয় | নবীন আশার খড়গ তোমার হাতে, জীর্ণ আবেশ কাটাে সুকঠোর ঘাতে, বন্ধন হােক ক্ষয় । তোমারি হউক জয় । এসো দুঃসহ, এসো এসো নির্দয়, তোমারি হউক জয় । এসো নির্মল, এসো এসো নিৰ্ভয়, আশ্বিন-কার্তিক ১৩২৪ d8 I I Y Sn