পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম v009 বাহ্যিকভাবে প্ৰবৃত্ত করিতে ইচ্ছা করি না। তাহাদিগকে আমার বন্ধু বলিয়া এবং সহযোগী বলিয়াই জানি । বিদ্যালয়ের কর্ম যেমন আমার, তেমনি তাহদেরও কর্ম- এ যদি না হয় তবে এ বিদ্যালয়ের থা প্রতিষ্ঠা । 3. আমি যে ভাবোৎসাহের প্রেরণায় সাহিত্যিক ও আর্থিক ক্ষতি এবং শারীরিক মানসিক নানা কষ্ট স্বীকার করিয়া এই বিদ্যালয়ের কর্মে আন্মোৎসর্গ করিয়াছি সেই ভাবাবেগ আমি সকলের কাছে। আশা কবি না। অনতিকালপূর্বে এমন সময় ছিল যখন আমি নিজের কাছ হইতেও ইহা আশা করিতে পরিতাম না । কিন্তু আমি অনেক চিন্তা করিয়া সুস্পষ্ট বুঝিয়াছি যে, বাল্যকালে ব্ৰহ্মচৰ্য-ব্ৰত, অর্থাৎ আত্মসংযম, শারীরিক ও মানসিক নির্মলতা, একাগ্রতা, গুরুভক্তি এবং বিদ্যাকে মনুষ্যত্বলাভের উপায় বলিয়া জানিয়া শান্ত সমাহিত ভাবে শ্রদ্ধার সহিত গুরুর নিকট হইতে সাধনা-সহকারে তাহা দুর্লভ ধনের নায় গ্রহণ করা- ইহাই ভারতবর্ষের পথ এবং ভারতবর্ষের একমাত্র রক্ষার উপায় । কিন্তু এই মত ও এই আগ্ৰহ আমি যদি অন্যের মনে সঞ্চার করিয়া না দিতে পারি। তবে সে আমার অক্ষমতা ও দুৰ্ভাগ্য- অন্যকে সেজন্য আমি দোষ দিতে পারি না । নিজের ভাব জোর করিয়া কাহারও উপর চাপানো যায় না- এবং এ-সকল ব্যাপারে কপটতা ও ভান সর্বাপেক্ষা হেয় । আমার মনের মধ্যে একটি ভাবের সম্পূর্ণতা জাগিতেছে বলিয়া অনুষ্ঠিত ব্যাপারের সমস্ত ক্ৰটি দৈন্য অপূর্ণতা অতিক্রম করিয়াও আমি সমগ্রভাবে আমার আদর্শকে প্রত্যক্ষ দেখিতে পাই- বর্তমানের মধ্যে ভবিষ্যৎকে, বীজের মধ্যে বৃক্ষকে উপলব্ধি করিতে পারি- সেইজন্য সমস্ত খণ্ডত দীনতা সত্ত্বেও, ভাবের তুলনায় কর্মের যথেষ্ট অসংগতি থাকিলেও আমার উৎসাহ ও আশা ম্ৰিয়মাণ হইয়া পড়ে না । যিনি আমার কাজকে খণ্ড খণ্ড ভাবে প্রতিদিনের মধ্যে বর্তমানের মধ্যে দেখিবেন, নানা বাধা-বিরোধ ও অভাবের মধ্যে দেখিবেন, তাহার উৎসাহ আশা সর্বদা সজাগ না থাকিতে পারে । সেইজনা আমি কাহারও কাছে বেশি কিছু দাবি করি না, সর্বদা আমার উদ্দেশ্য লইয়া অনাকে বলপূর্বক উৎসাহিত করিবার চেষ্টা করি না— কালের উপর, সত্যের উপরে, বিধাতার উপরে সম্পূৰ্ণ ধৈর্যের সহিত নির্ভর করিয়া থাকি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক নিয়মে অন্তরের ভিতর হইতে অলক্ষ্য শক্তিতে যাহার বিকাশ হয় তাহাঁই যথার্থ এবং তাহার উপরেই নির্ভর করা যায় । ক্রমাগত বাহিরের উত্তেজনায়, কতক লজ্জায়, কতক ভাবাবেগে, কতক অনুকরণে যাহার উৎপত্তি হয় তাহার উপরে সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায় না এবং অনেক সময়ে তাহা হইতে কুফল উৎপন্ন হয় । আমি আশা করিয়া আছি যে, অধ্যাপকগণ, আমার অনুশাসনে নহে, অন্তরস্থ কল্যাণবীজের সহজ বিকাশে ক্রমশই আগ্রহের সহিত আনন্দের সহিত ব্ৰহ্মচর্যাশ্রমের সঙ্গে নিজের জীবনকে একীভূত করিতে পরিবেন । তাহারা প্রত্যহ যেমন ছাত্রদের সেবা ও প্ৰণাম গ্ৰহণ কবিবেন তেমনি আত্মত্যাগ ও আত্মসংযমের দ্বারা ছাত্রদের নিকটে আপনাদিগকে প্রকৃত ভক্তির পাত্ৰ করিয়া তুলিবেন । পক্ষপাত অবিচার অধৈৰ্য, অল্প কারণে অকস্মাৎ রোষ, অভিমান, অপ্রসন্নতা, ছাত্র বা ভূতাদের সম্বন্ধে চপলতা, লঘুচিত্ততা, ছোটােখাটাে অভ্যাসদোষ, এ-সমস্ত প্রতিদিনের প্রাণপণ যত্নে পরিহার করিতে থাকিবেন। নিজেরা ত্যাগ ও সংযম আভাস না করিলে ছাত্রদের নিকট তাঁহাদের সমস্ত উপদেশ নিস্ফল হইবেএবং ব্ৰহ্মচর্যাশ্রমের উজ্জ্বলতা স্নান হইয়া যাইতে থাকিবে । ছাত্রেরা বাহিরে ভক্তি ও মনে মনে উপেক্ষা করিতে যেন না শেখে । আমার ইচ্ছা, গুরুদের সেবা ও অতিথিদের প্রতি আতিথ্য প্রভৃতি কার্যে রখীর দ্বারা বিদ্যালয়ে আদশ স্থাপন করা হয় । এ-সমস্ত কার্যে যথার্থ গীেরব আছে, অবমান নাই- এই কথা যেন ছাত্রদের মনে মুদ্রিত হয় । সকলেই যেন আগ্রহের সহিত অগ্রসর হইয়া এই সমস্ত সেবাকার্যে প্রবৃত্ত হয় । * ভাগতদের অভিবাদন, তাহদের সহিত শিষ্ট্রালাপ ও ঠাহীদের প্রতি সযত্ন ব্যবহার যেন সকল ইত্রিকে বিশেষরূপে অভ্যাস করানো হয়। বিদ্যালয়ের নিকটে কোনো আগন্তুক উপস্থিত হইলে **াকে যেন বিনয়ের সহিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে শেখে- ছাত্ৰগণ ভূত্যদের প্রতি যেন অবজ্ঞা প্ৰকাশ না করে এবং তাহারা পীড়াগ্ৰস্ত হইলে যেন তাহদের সংবাদ লয়। ছাত্রদের মধ্যে কাহারও