পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

628 br মুরলা । [স্বাগত]] মুরলা । কবি । রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নিশার কুহক-বলে নীরবতাসিন্ধুতলে। মগ্ন হয়ে ঘুমাইছে বিশ্ব চরাচরপ্ৰশান্ত সাগরে হেন তরঙ্গ না তুলে যেন অধীর-উচ্ছাস-ময় সংগীতের স্বর ! তটিনী কি শান্ত আছে ! ঘুমাইয়া পড়িয়াছে ভুলে যদি ঘুমে ঘুমে তাঁটের চরণ চুমে সে চুম্বনধবনি শুনে চমকে আপনি ! তাই বলি অতি ধীরে- অতি ধীরে গাও গো, রজনীর কণ্ঠ-সাথে সুকণ্ঠ মিলাও গো ! মুরলার প্রতি কেন লো মলিন, সখি, মুখানি তোমার ? কাছে এসো, মোর পাশে বোসো একবার ! কেন, সখি, বল মোরে, যখনি দেখেছি তোরে মাটি-পানে নত দুটি বিষগ্ন নয়ান ! আননের দুই পাশ আবদ্ধ কুন্তলরাশকরুণ ও মুখখানি বড়ো, সখি, স্নান ! সত্য মান কি গো, কবি, এ মুখ আমার ? নিশীথবাতাস লাগি মনে কত উঠে জাগি নিস্তব্ধ জোছনারাতে ভাবনার ভার ! আহা কি করুণ, সখা, হৃদয় তোমার ! কবি গো ! বুক যে যায়— ভেঙে যায়, ফেটে যায়— অশ্রািজল রুধিবারে পারিনাক আর ! পারি নে- পারি নো সখা, পারি। নে গো আর ! ভেঙে বুঝি ফেলে তারা মর্মকারাগার ! একবার পায়ে ধরে কেঁদে নিই প্ৰাণ ভরেএকবার শুধু, কবি, শুধু একবার ! ! যুঝিছে বুকের মাঝে শত অশ্রুধার ! একটি প্ৰাণের কথা রয়েছে গোপনে, বলিব বলিব তোরে করিতেছি মনে ! আজ জোছনার রাতে বিপাশার তীরে কাছে আয়, সে কথাটি বলি ধীরে ধীরে । কি কথা সে ? বলে কবি ! করাহ প্ৰকাশ ! কে জানে উঠেছে হৃদে কিসের উচ্ছস । খেলিছে মর্মের মাঝে অধীর উল্লাস ! অথচ, উল্লাস সেই সুকুমার হেন, শিশিরের বাস্পপ দিয়ে গঠিত সে যেন । হৃদয়ে উঠেছে যেন বন্যা জোছনার, মধুর অশান্তিময় হৃদয় আমার ।