পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ * eఏ বেশি ভালোবাসা বোধ হয় না দূরে গেলে ? তাকে দেখতে আস না দেখা দিতে আস ?” এই সমস্ত নির্ণয় করে তবে ওষুধ আনতে হবে । চন্দ্রকান্ত । কাগজে বিজ্ঞাপন বেরোবে— “হৃদয়বেদনার জন্য অতি উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ । বিরহ-নিবারিণী বটিকা। রাত্রে একটি, সকালে একটি সেবন করিলে সমস্ত বিরহ দূর হইয়া অন্তঃকরণ পরিষ্কার হইয়া যাইবে ।” বিনোদবিহারী। আবার প্রশংসাপত্র বেরোবে— কেউ লিখবে – “আমি একাদিক্রমে আড়াইমাস কাল আমার প্রতিবেশিনীর প্রেমে ভূগিতেছিলাম— নানারূপ চিকিৎসায় কোনো আরাম না পাইয়া অবশেষে আপনার জগদ্বিখ্যাত প্রেমাঙ্কুশ রস সেবন করিয়া প্রায় সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিয়াছি— এক্ষণে উক্ত প্রতিবেশিনীর জন্য ভ্যালুপেয়েরে বড়ো এক শিশি পাঠাইয়া বাধিত করিবেন, তাহার ব্যাধিটা আমার অপেক্ষাও অনেক প্রবল জানিবেন । ইতি— ” নিমাই । ওহে চন্দর, তামাক ডাকো । তোমরা ধোয়ার মধ্যে বাস কর, তোমাদের আর তামাকের দরকার হয় না, আমরা পৃথিবীতে থাকি আমাদের তামাকটা পানটা, এমন কি সামান্য ভাতটা ডালটারও আবশ্যক ঠেকে। চন্দ্রকান্ত । বটে বটে, ভুল হয়ে গেছে, মাপ করে নিমাই। ওরে ভূতে, —আবাগের বেটা ভূত— তামাক দিয়ে যা — আচ্ছা ভাই বিহু, মেয়েমানুষের কথা যে বলছিলে কী রকম মেয়েমানুষ তোমার পছন্দসই । তোমার আইডিয়ালটি কী আমাকে বলো দেখি । বিনোদবিহারী । আমি কী রকম চাই জান ? যাকে কিছু বোঝবার জে৷ নেই । যাকে ধরতে গেলে পালিয়ে যায়— পালাতে গেলে ধরে টেনে নিয়ে আসে । যে শরতের আকাশের মতো এদিকে বেশ নির্মল কিন্তু কখন রোদ উঠবে, কখন মেঘ করবে, কখন বৃষ্টি হবে, কখন বিদ্যুৎ দেখা দেবে, তা স্বয়ং বিজ্ঞানশাস্ত্রের পিতৃপিতামহও ঠিক করে বলতে পারে না। চন্দ্রকান্ত । বুঝেছি— যে কোনোকালেই পুরোনো হবে না। মনের কথা টেনে বলেছ ভাই। কিন্তু পাওয়া শক্ত । আমরা ভুক্তভোগী, জানি কি না, বিয়ে করলেই মেয়েগুলো দু-দিনেই বহুকেলে পড়া পুথির মতো হয়ে আসে ; মলাটটা আধখান। ছিড়ে ঢলঢল করছে, পাতাগুলো দাগি হয়ে খুলে খুলে আসছে— কোথায় সে জাটসটি বাধুনি, কোথায় সে সোনার জলের ছাপ— তা ছাড়া যেখানে খুলে দেখ সেই এক কথা— “কমলিনী অতি সুবোধ মেয়ে, সে ঘরকল্পায় কদাচ আলস্ত করে না ; সে প্রত্যুষে উঠিয়াই গৃহমার্জন এবং গোময়লেপন করে ; যথাসময়ে স্বামীর অন্নব্যঞ্জন প্রস্তুত