পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&8や রবীন্দ্র-রচনাবলী চন্দ্রকান্তের বাসা চন্দ্রকান্ত চন্দ্রকান্ত । না: ! এ আগাগোড়া কেবল ছেলেমাচুষি করা হয়েছে। অামার এমন অমৃতাপ হচ্ছে । মনে হচ্ছে, যেন আমিষ্ট এ সমস্ত কাগুটি ঘটিয়েছি। ইদিকে এত কল্পনা, এত কবিত্ব, এত মাতামাতি, আর বিয়ের দু-দিন না যেতে যেতেই কিছু আর মনে ধরছে না। ওঁদের জন্যে একটি আলাদা জগৎ ফরমাশ দিতে হবে । একটি শাস্তিপুরে ফিনফিনে জগৎ— কেবল চাদের আলো, ঘুমের ঘোর আর পাগলের পাগলামি দিয়ে তৈরি । নিমাইয়ের প্রবেশ নিমাই। কী হচ্ছে চন্দরদী। চন্দ্রকান্ত । না, নিমাই, তোরা আর বিয়ে থাওয়া করিসনে । নিমাই । কেন বলে দেখি— তোমার ঘাড়ে ম্যালথসের ভূত চাপল নাকি । চন্দ্রকান্ত । এখনকার ছেলেরা তোরা মেয়েমানুষকে বিয়ে করবার যোগ্য ন’স । তোরা কেবল লম্বাচওড়া কথা ক’বি আর কবিতা লিখবি, তাতে যে পৃথিবীর কী উপকার হবে ভগবান জানেন । নিমাই । কবিতা লিখে পৃথিবীর কী উপকার হয় বলা শক্ত, কিন্তু এক-এক সময়ে নিজের কাজে লেগে যায় সন্দেহ নেই। যা হোক এত রাগ কেন ? চন্দ্রকান্ত । শুনেছ তো সমস্তই। আমাদের বিমুর তার স্ত্রীকে পছন্দ হচ্ছে না। নিমাই । বাস্তবিক, এ রকম গুরুতর ব্যাপার নিয়ে খেলা করাটা ভালো হয়নি । চন্দ্রকান্ত । বিহুটা যে এত অপদার্থ তা কি জানতুম ? একটা স্ত্রীলোককে ভালোবাসবার ক্ষমতাটুকুও নেই ? একবার ভেবে দেখ দেখি ভাই— একটি বালিকা হঠাৎ একদিন রাত্রে তার আশৈশব আত্মীয়স্বজনের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে সমস্ত ইহকাল পরকাল তোমার বাম হন্তে তুলে দিলে আর তার পরদিন সকালবেল উঠে কিনা তাকে তোমার পছন্দ হল না ! এ কি পছন্দের কথা ! নিমাই । সেই জন্য তো ভাই গোড়ায় একবার দেখে শুনে নেওয়া উচিত ছিল । তা এখন কী করবে বলো দেখি ।