পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি e8S গাড়ি পাওয়া গেল। বিহারী পুনরায় কোচবাক্সে চড়িয়া বসিল । বিনোদিনী কোনো কথা না বলিয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিল, জ্যোৎস্নায় স্তম্ভিত তরুশ্রেণী ধাবমান নিবিড় ছায়াস্রোতের মতো তাহার চোখের উপর দিয়া চলিয়া যাইতে লাগিল । আশা গাড়ির কোণে ঘুমাইয়া পড়িল । মহেন্দ্র সুদীর্ঘ পথ নিতান্ত বিমর্ষ হইয়া বসিয়া एांकिल । سوانج চড়িভাতির দুর্দিনের পরে মহেন্দ্র বিনোদিনীকে আর-এক বার ভালো করিয়া আয়ত্ত করিয়া লইতে উৎস্থক ছিল। কিন্তু তাহার পরদিনেই রাজলক্ষ্মী ইনফ্লুয়েঞ্জা-জরে পড়িলেন। রোগ গুরুতর নহে, তবু তাহার অমুখ ও দুর্বলতা যথেষ্ট । বিনোদিনী দিনরাত্রি তাহার সেবায় নিযুক্ত হইল । মহেন্দ্ৰ কহিল, ‘দিনরাত এমন করিয়া খাটিলে শেষকালে তুমিই যে অস্থখে পড়িবে । মার সেবার জন্তে আমি লোক ঠিক করিয়া দিতেছি ।” বিহারী কহিল, “মহিনদা, তুমি অত ব্যস্ত হইয়ে না । উনি সেবা করিতেছেন, করিতে দাও । এমন করিয়া কি আর কেহ করিতে পরিবে ।” মহেন্দ্র রোগীর ঘরে ঘন ঘন যাতায়াত আরম্ভ করিল। একটা লোক কোনো কাজ করিতেছে না, অথচ কাজের সময় সর্বদাই সঙ্গে লাগিয়া আছে, ইহা কর্মিষ্ঠা বিনোদিনীর পক্ষে অসহ । সে বিরক্ত হইয়া দুই-তিন বার কহিল, “মহিনবাবু, আপনি এখানে বসিয়া থাকিয়া কী স্ববিধা করিতেছেন । আপনি যান— অনর্থক কালেজ কণমাই করিবেন না।” মহেন্দ্র তাহাকে অনুসরণ করে, ইহাতে বিনোদিনীর গর্ব এবং মুখ ছিল, কিন্তু তাই বলিয়া এমনতরো কাঙালপনা, রুগ্ন মাতার শষ্যাপার্থেও লুন্ধহৃদয়ে বসিয়া থাকা— ইহাতে তাহার ধৈর্য থাকিত না, ঘৃণাবোধ হইত। কোনো কাজ যখন বিনোদিনীর উপর নির্ভর করে, তখন সে আর-কিছুই মনে রাখে না । যতক্ষণ খাওয়ানো-দাওয়ানো, রোগীর সেবা, ঘরের কাজ প্রয়োজন, ততক্ষণ বিনোদিনীকে কেহ অনবধান দেখে নাই— সেও প্রয়োজনের সময় কোনোপ্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার দেখিতে পারে না । بچے বিহারী অল্পক্ষণের জন্য মাঝে-মাঝে রাজলক্ষ্মীর সংবাদ লইতে আসে । ঘরে চুকিয়াই কী দরকার, তাহা সে তখনই বুঝিতে পারে— কোথায় একটা-কিছুর অভাব আছে, তাহা তাহার চোখে পড়ে— মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত ঠিক করিয়া দিয়া সে বাহির 88 س----9\