পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X8 ब्रदौटबॅ-ब्रळ्नांवलौ করিবারই কথা । কাল রাত্রে ঠাকুরপো ষে কীর্তি করিলেন। একেবারে পাগলের মতো আসিয়া উপস্থিত। আমার তো তার পরে ঘুম হইল না।” রাজলক্ষ্মী মুখ ভার করিয়া রহিলেন, হা-না কোনো উত্তরই করিলেন না। বিনোদিনী বলিল, “হয়তো চোখের বালির সঙ্গে সামান্ত কিছু খিটিমিটি হইয়া থাকিবে, আর দেখে কে । তখনই নালিশ কিংবা নিম্পত্তির জন্তে আমাকে ধরিয়া লইয়া যাওয়া চাই, রাত পোহাইতে তর সয় না। যাই বল পিসিম, তুমি রাগ করিয়ো না, তোমার ছেলের সহস্র গুণ থাকিতে পারে, কিন্তু ধৈর্যের লেশমাত্র নাই । ওই জন্তেই আমার সঙ্গে কেবলই ঝগড়া হয় ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “বউ, তুমি মিথ্যা বকিতেছ— আমার আজ আর কোনো কথা ভালো লাগিতেছে না।” বিনোদিনী কহিল, “আমারও কিছু ভালো লাগিতেছে না, পিসিমা । তোমার মনে আঘাত লাগিবে, এই ভয়েই মিথ্যা কথা দিয়া তোমার ছেলের দোষ ঢাকিবার চেষ্টা করিয়াছি । কিন্তু এমন হইয়াছে যে, আর ঢাকা পড়ে না ।” রাজলক্ষ্মী। আমার ছেলের দোষ-গুণ আমি জানি— কিন্তু তুমি যে কেমন মায়াবিনী, তাহা আমি জানিতাম না। বিনোদিনী কী একটা বলিবার জন্য উষ্ঠত হইয়া নিজেকে সংবরণ করিল— কহিল, *সে-কথা ঠিক পিসিমা, কেহ কাহাকেও জানে না। নিজের মনও কি সবাই জানে । তুমি কি কখনো তোমার বউয়ের উপর দ্বেষ করিয়া এই মায়াবিনীকে দিয়া তোমার ছেলের মন ভুলাইতে চাও নাই ? একবার ঠাওর করিয়া দেখে দেখি ।” রাজলক্ষ্মী অগ্নির মতো উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিলেন– কহিলেন, “হতভাগিনী, ছেলের সম্বন্ধে মার নামে তুই এমন অপবাদ দিতে পারিস ? তোর জিব খসিয়া পড়িবে না ।” • বিনোদিনী অবিচলিতভাবে কহিল, “পিসিমা, আমরা মায়াবিনীর জাত, আমার মধ্যে কী মায়া ছিল, তাহা আমি ঠিক জানি নাই, তুমি জানিয়াছ,— তোমার মধ্যেও কী মায়া ছিল, তাহা তুমি ঠিক জান নাই, আমি জানিয়াছি। কিন্তু মায়া ছিল, নহিলে এমন ঘটনা ঘটিত না । ফাদ আমিও কতকটা জানিয়া এবং কতকটা না জানিয়া পাতিয়াছি । ফাদ তুমিও কতকটা জানিয়া এবং কতকটা না জানিয়া পাতিয়াছ । আমাদের জাতের ধর্ম এইরূপ— আমরা মায়াবিনী।” রোষে রাজলক্ষ্মীর যেন কণ্ঠরোধ হইয়া গেল— তিনি ঘর ছাড়িয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন ।