পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وان ج 6 স্বদেশী সমাজ বাংলাদেশের জলকষ্ট নিবারণ সম্বন্ধে গবমেন্টের মন্তব্য প্রকাশিত হইলে পর এই প্রবন্ধ লিখিত হয় । “হজলা স্বফলা” বঙ্গভূমি তৃষিত হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু সে চাতক পক্ষীর মতো উধের দিকে তাকাইয়া আছে– কতৃপক্ষীয়ের জলবর্ষণের ব্যবস্থা না করিলে তাহার আর গতি নাই । গুরুগুরু মেঘগর্জন শুরু হইয়াছে— গবর্মেন্ট সাড়া দিয়াছেন– তৃষ্ণানিবারণের যাহয়-একটা উপায় হয়তে হুইবে— অতএব আপাতত আমরা সেজন্য উদবেগ প্রকাশ করিতে বসি নাই । আমাদের চিন্তার বিষয় এই যে, পূর্বে আমাদের যে একটি ব্যবস্থা ছিল, ষাহাতে সমাজ অত্যন্ত সহজ নিয়মে আপনার সমস্ত অভাব আপনিই মিটাইয়া লইত— দেশে তাহার কি লেশমাত্র অবশিষ্ট থাকিবে না । আমাদের যে-সকল অভাব বিদেশীরা গড়িয়া তুলিয়াছে ও তুলিতেছে, সেইগুলাই না হয় বিদেশী পূরণ করুক । অল্পক্লিষ্ট ভারতবর্ষের চায়ের তৃষ্ণা জন্মাইয়া দিবার জন্য কৰ্জনসাহেব উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন, আচ্ছা, না হয় অ্যাও যুল-সম্প্রদায় আমাদের চায়ের বাটি ভর্তি করিতে থাকুন ; এবং এই চায়ের চেয়েও যে জালাময় তরলরসের তৃষ্ণ — যাহা প্রলয়কালের সুর্যাস্তচ্ছটার দ্যায় বিচিত্র উজ্জল দীপ্তিতে উত্তরোত্তর আমাদিগকে প্রলুব্ধ করিয়া তুলিতেছে— তাহা পশ্চিমের সামগ্রী এবং পশ্চিমদিগদেবী তাহার পরিবেষণের ভার লইলে অসংগত হয় না— কিন্তু জলের তৃষ্ণা তো স্বদেশের খাটি সনাতন জিনিস ! ব্রিটিশ গবর্মেন্ট আসিবার পূর্বে আমাদের জলপিপাসা ছিল এবং এতকাল তাহার নিবৃত্তির উপায় বেশ ভালোরূপেই হইয়া আসিয়াছে— এজন্য শাসনকর্তাদের রাজদগুকে কোনোদিন তো চঞ্চল হইয়া উঠিতে হয় নাই । আমাদের দেশে যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্যরক্ষা এবং বিচারকার্ধ রাজা করিয়াছেন, কিন্তু বিদ্যাদান হইতে জলদান পর্যন্ত সমস্তই সমাজ এমন সহজভাবে সম্পন্ন করিয়াছে যে, এত নব নব শতাব্দীতে এত নব নব রাজার রাজত্ব আমাদের দেশের উপর দিয়া বস্তার মতে বহিয়া গেল, তবু আমাদের ধম নষ্ট করিয়া আমাদিগকে পশুর মতো করিতে পারে নাই, সমাজ নষ্ট করিয়া আমাদিগকে একেবারে লক্ষ্মীছাড়া করিয়া দেয় নাই । রাজায় রাজায় লড়াইয়ের অস্ত নাই— কিন্তু আমাদের মর্মরায়মাণ বেণুকুঞ্জে, আমাদের