পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रबौछ-ब्रध्नावलौ مهٔ একটা কলের জিনিস সন্দেহ নাই— সৈন্যদিগকে কলের মতো হইয়া উঠিতে হয় এবং কলের মতোই চলিতে হয় । কিন্তু তৎসত্ত্বেও জাপানের প্রত্যেক সৈন্ত সেই কলকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছে, তাহারা অন্ধ জড়বৎ নহে, রক্তোম্মাদগ্ৰস্ত পশুবৎও নহে ; তাহারা প্রত্যেকে মিকাডোর সহিত এবং সেই সূত্রে স্বদেশের সহিত সম্বন্ধবিশিষ্ট—সেই সম্বন্ধের নিকট তাহারা প্রত্যেকে আপনাকে উৎসর্গ করিতেছে । এইরূপে আমাদের পুরাকালে প্রত্যেক ক্ষত্রসৈন্য আপন রাজাকে বা প্রভুকে অবলম্বন করিয়া ক্ষাত্রধর্মের কাছে আপনাকে নিবেদন করিত— রণক্ষেত্রে তাহারা শতরঞ্জখেলার দাবাৰোড়ের মতো মরিত না— মানুষের মতো হৃদয়ের সম্বন্ধ লইয়া ধর্মের গৌরব লইয়া মরিত । ইহাতে যুদ্ধব্যাপার অনেক সময়েই বিরাট আত্মহত্যার মতো হইয়া দাড়াইত— এবং এইরূপ কাগুকে পাশ্চাত্ত্য সমালোচকেরা বলিয়া থাকেন, “ইহা চমৎকার— কিন্তু ইহা যুদ্ধ নহে।” জাপান এই চমৎকারিত্বের সঙ্গে যুদ্ধকে মিশাইয়া প্রাচ্য-প্রতীচ্য উভয়েরই কাছে ধন্য হইয়াছেন । যাহা হউক, এইরূপই আমাদের প্রকৃতি । প্রয়োজনের সম্বন্ধকে আমরা হৃদয়ের সম্বন্ধ দ্বারা শোধন করিয়া লইয়া তবেই ব্যবহার করিতে পারি। স্থতরাং অনাবশুক দায়িত্বও আমাদিগকে গ্রহণ করিতে হয় । প্রয়োজনের সম্বন্ধ সংকীর্ণ —আপিসের মধ্যেই তাহার শেষ। প্রভূভূত্যের মধ্যে যদি কেবল প্রভূভূত্যের সম্বন্ধটুকুই থাকে, তবে কাজ আদায় এবং বেতনদানের মধ্যেই সমস্ত চুকিয়া যায়, কিন্তু তাহার মধ্যে কোনোপ্রকার আত্মীয়সম্বন্ধ স্বীকার করিলেই দায়িত্বকে পুত্রকন্যার বিবাহ এবং শ্রাদ্ধশান্তি পর্যস্ত টানিয়া লইয়া যাইতে হয় । আমার কথার আর-একটা আধুনিক দৃষ্টান্ত দেখুন। আমি রাজসাহি ও ঢাকার প্রোভিনশু্যাল কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলাম । এই কনফারেন্স-ব্যাপারকে আমরা একটা গুরুতর কাজের জিনিস বলিয়া মনে করি, সন্দেহ নাই— কিন্তু আশ্চর্য এই দেখিলাম, ইহার মধ্যে কাজের গরজের চেয়ে অতিথিসৎকারের ভাবটাই স্বপরিস্ফুট । যেন বরষাত্রিদল গিয়াছি— আহার-বিহার আরাম-আমোদের জন্ত দাবি ও উপদ্রব এতই অতিরিক্ত যে, তাহা আহবানকর্তাদের পক্ষে প্রায় প্রাণান্তকর । যদি প্তাহার। বলিতেন, তোমরা নিজের দেশের কাজ করিতে আসিয়াছ, আমাদের মাথা কিনিতে আস নাই— এত চর্বাচুস্তলেঙ্কপেয়, এত শয়নাসন, এত লেমনেডসোডাওয়াটার-গাড়িঘোড়া, এত রসদের দায় আমাদের পরে কেন— তবে কথাট অন্যায় হইত না । কিন্তু কাজের দোহাই দিয়া ফাকায় থাকাটা আমাদের জাতের লোকের কর্ম নয়। আমরা শিক্ষার চোটে যত ভয়ংকর কেজো হইয়া উঠি না কেন,