পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tbr a রবীন্দ্র-রচনাবলী কেহ বা বাংলার স্কট বলিয়া পরিচিত ছিলেন,– এমন কি, বাংলার অভিনেতাকে সম্মানিত করিতে হইলে তাহাকে বাংলার গ্যারিক ‘বলিলে আমাদের আশ মিটিত, অথচ গ্যারিকের সহিত কাহারও সাদৃশুনির্ণয় আমাদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না ; কারণ গ্যারিক যখন নটলীলা সংবরণ করিয়াছিলেন তখন আমাদের দেশের নাট্যাভিনয় যাত্রার দলের মধ্যে জন্মান্তর যাপন করিতেছিল । কিন্তু, প্রথম অবস্থার চেয়ে এই দ্বিতীয় অবস্থাটা আমাদের পক্ষে আশাজনক । কারণ, বাংলায় বায়রন-স্কটে স্বদুর সাদৃশ্ব যে মিলিতে পারে, এ-কথা ইংরেজিওয়ালার পক্ষে স্বীকার করা তখনকার দিনের একটা স্বলক্ষণ বলিতে হইবে । এখনকার তৃতীয় অবস্থায় ঐ ইংরেজি উপাধিগুলার কুয়াশা কাটিয়া গিয়া বাংলা সাহিত্য আর কাহারও সহিত তুলনার আশ্রয় না লইয়া নিজমূর্তিতে প্রকাশ পাইবার চেষ্টা করিতেছে । আমাদের সাহিত্যের প্রতি দেশের লোকের যথার্থ সম্মান ইহাতে ব্যক্ত হইতেছে । ইহার কারণ, বাংলা সাহিত্য ক্রমশ আপনার মধ্যে একটা স্বাধীনতার তেজ অনুভব করিতেছে । ইহাতে প্রমাণ হয়, আমাদের মনটা ইংরেজি গুরুমহাশয়ের অপরিমিত শাসন হইতে অল্পে অল্পে মুক্ত হইয়া আসিতেছে। একদিন গেছে যখন আমাদের শিক্ষিত লোকেরা ইংরেজি পুথির প্রত্যেক কথাই বেদবাক্য বলিয়া জ্ঞান করিত। ইংরেজিগ্রস্ততা এতদূর পর্যস্ত সাংঘাতিক হইয়া উঠিয়াছিল যে, ইংরেজি বিধিবিধানের সহিত কোনোপ্রকারে মিলাইতে না পারিয়া জামাইষষ্ঠ ফিরাইয়া দিয়াছে এবং আমোদ করিয়া বান্ধবের গায়ে আবির-লেপনকে চরিত্রের একটা চিরস্থায়ী কলঙ্ক বলিয়া গণ্য করিয়াছে— এতবড়ো শিক্ষিত-মূৰ্খতার প্রমাণ আমরা পাইয়াছি । এ-রোগের সমস্ত উপসর্গ যে একেবারে কাটিয়াছে, তাহা বলিতে পারি না, কিন্তু আরোগ্যের লক্ষণ দেখা দিয়াছে । আজকাল আমরা ইংরেজি ছাপাখানার দ্বারে ধন্না না দিয়া নিজে সন্ধান করিতে, নিজে যাচাই করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, এমন কি পুথির প্রতিবাদ করিতেও সাহস হয় । নিজের মধ্যে এই যে একটা স্বাতন্ত্র্যের অনুভূতি যে-অনুভূতি না থাকিলে শক্তির যথার্থ ক্ষতি হইতে পারে না, ইহা কোনো একটা দিকে আরম্ভ হইলে ক্রমে সকল দিকেই আপনাকে প্রকাশ করিতে থাকে । ধর্মে, কর্মে, সমাজে, সর্বত্র আমরা ইহার পরিচয় পাইতেছি । কিছুকাল পূর্বে আমাদের দেশের শাস্ত্র এবং শাসন সমস্তই আমরা খ্ৰীস্টান পাদরির চোখে দেখিতাম— পাদরির কষ্টিপাথরে কোনটাতে কী রকম