পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e রবীন্দ্র-রচনাবলী نمون দেশের মধ্যে এক ধনধান্য, এক স্থখদুঃখ এক বিরাট প্রকৃতির মাঝখানে রাখিয়া নিরস্তর এক করিয়া তুলিতেছেন, সেই দেশের দেবতা দুর্জেয়, তাহাকে কোনোদিন কেহই অধীন করে নাই, তিনি ইংরেজি স্কুলের ছাত্র নহেন, তিনি ইংরেজ রাজার প্রজা নছেন, আমাদের বহুতর দুর্গতি র্তাহাকে স্পর্শও করিতে পারে নাই, তিনি প্রবল, তিনি চিরজাগ্ৰত— ইহার এই সহজমুক্ত স্বরূপ দেখিতে পাইলে তখনই আনন্দের প্রাচুর্ধবেগে আমরা অনায়াসেই পূজা করিব, ত্যাগ করিব, আত্মসমর্পণ করিব, কোনো উপদেশের অপেক্ষা থাকিবে না । তখন দুর্গম পথকে পরিহার করিব না, তখন পরের প্রসাদকেই জাতীয় উন্নতিলাভের চরম সম্বল মনে করাকে পরিহাস করিব এবং অপমানের মূল্যে আশু ফললাভের উদ্ধৃবৃত্তিকে অস্তরের সহিত অবজ্ঞা করিতে পারিব । আজ একটি আকস্মিক ঘটনায় সমস্ত বাঙালিকে একই বেদনায় আঘাত করাতে আমরা যেন ক্ষণকালের জন্যও আমাদের এই স্বদেশের অন্তর্যামী দেবতার আভাস পাইয়াছি । সেইজন্য, যাহারা কোনোদিন চিন্তা করিত না, তাহারা চিস্তা করিতেছে ; যাহারা পরিহাস করিত তাহারা স্তব্ধ হইয়াছে ; যাহারা কোনো মহান সংকল্পের দিকে তাকাইয়া কোনোরূপ ত্যাগস্বীকার করিতে জানিত না, তাহারাও যেন কিছু অসুবিধা ভোগ করিবার জন্য উদ্যম অনুভব করিতেছে এবং যাহারা প্রত্যেক কথাতেই পরের স্বারে ছুটিতে ব্যগ্র হইয়া উঠিত তাহারাও আজ কিঞ্চিৎ দ্বিধার সহিত নিজের শক্তি সন্ধান করিতেছে। একবার এই আশ্চর্য ব্যাপারটা ভালো করিয়া মনের মধ্যে অনুভব করিয়া দেখুন। ইতিপূর্বে রাজার কোনো অপ্রিয় ব্যবহারে বা কোনো অনভিমত আইনে আঘাত পাইয়া আমরা অনেকবার অনেক কলকৌশল, অনেক কোলাহল, অনেক সভাআহবান করিয়াছি ; কিন্তু আমাদের অন্ত:করণ বল পায় নাই, আমরা নিজের চেষ্টাকে নিজে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি নাই, এইজন্য সহস্ৰ অতু্যক্তি দ্বারাও রাজার প্রত্যয় আকর্ষণ করিতে পারি নাই, দেশেরও ঔদাসীন্য দূর করিতে পারি নাই । আজ আসন্ন বঙ্গবিভাগের উদযোগ বাঙালির পক্ষে পরম শোকের কারণ হইলেও এই শোক আমাদিগকে নিরুপায় অবসাদে অভিভূত করে নাই । বস্তুত, বেদনার মধ্যে আমরা একটা আনন্দই অনুভব করিতেছি । আনন্দের কারণ, এই বেদনার মধ্যে আমরা নিজেকে অনুভব করিতেছি— পরকে খুজিয়া বেড়াইতেছি না । আনন্দের কারণ, আমরা আভাস পাইয়াছি আমাদের নিজের একটা শক্তি আছে, সেই শক্তির প্রভাবে আজ আমরা ত্যাগ করিবার, দুঃখভোগ করিবার পরম অধিকার লাভ করিয়াছি । আজ আমাদের বালকেরাও বলিতেছে, "পরিত্যাগ করে, বিদেশের বেশভূষা, বিদেশের