পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী আবার তোমারে পাব পরশ-বন্ধনে । এমনি সমস্ত বিশ্ব প্রলয়ে স্বজনে জলিছে নিবিছে, যেন খদ্যোতের জ্যোতি— কখনো বা ভাবময়, কখনো মুরতি । রজনী গভীর হল, দীপ নিবে আসে ; পদ্মার স্থদুর পারে পশ্চিম আকাশে কখন যে সায়াহ্নের শেষ স্বর্ণরেখা মিলাইয়া গেছে ; সপ্তর্ষি দিয়েছে দেখা তিমির-গগনে ; শেষ ঘট পূর্ণ করে কখন বালিকা-বধু চলে গেছে ঘরে ; হেরি’ কৃষ্ণপক্ষ রাত্রি একাদশী তিথি দীর্ঘপথ শূন্তক্ষেত্র, হয়েছে অতিথি গ্রামে গৃহস্থের ঘরে পান্থ পরবাসী ; কথন গিয়েছে থেমে কলরবরাশি মাঠপারে কৃষিপল্লী হতে ; নদীতীরে বৃদ্ধ কৃষাণের জীর্ণ নিভৃত কুটিরে কখন জলিয়াছিল সন্ধ্যাদীপখানি, কথন নিবিয়া গেছে— কিছুই না জানি । কী কথা বলিতেছিকু, কী জানি, প্রেয়সী, অধ-অচেতনভাবে মনোমাঝে পশি স্বপ্নমুগ্ধ-মতো । কেহ শুনেছিলে সে কি, কিছু বুঝেছিলে প্রিয়ে, কোথাও আছে কি কোনো অর্থ তার । সব কথা গেছি ভুলে, শুধু এই নিদ্রাপূর্ণ নিশীথের কুলে অন্তরের অন্তহীন অশ্র-পারাবার উদ্বেলিয়। উঠিয়াছে হৃদয়ে আমার গম্ভীর নিস্বনে ।