পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سطسيسيسصميسيص ○brO রবীন্দ্র-রচনাবলী করিতে লাগিল এবং বিনয়কে কহিল, “একজন ডাক্তার ডাকলে হয় না ?” বাড়ির কাছেই ডাক্তার ছিল। বিনয় তাহাকে ডাকিয়া আনিতে বেহারা পঠাইয়া দিল । ঘরের এক পাশে টেবিলের উপরে একটা আয়না, তেলের শিশি ও চুল আঁচড়াইবার সরঞ্জাম ছিল। বিনয় সেই মেয়েটির পিছনে দাড়াইয়া সেই আয়নার দিকে একদৃষ্টি চাহিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিল। বিনয় ছেলেবেলা হইতেই কলিকাতার বাসায় থাকিয়া পড়াশুনা করিয়াছে। সংসারের সঙ্গে তাহার যাহা-কিছু পরিচয় সে-সমস্তই বইয়ের ভিতর দিয়া। নিঃসম্পৰ্কীয়া ভদ্রস্ত্রীলোকের সঙ্গে তাহার কোনোদিন কোনো পরিচয় হয় নাই | আয়নার দিকে চাহিয়া দেখিল, যে মুখের ছায়া পড়িয়াছে সে কী সুন্দর মুখ ! মুখের প্রত্যেক রেখা আলাদা করিয়া দেখিবার মতো তাহার চােখের অভিজ্ঞতা ছিল না। কেবল সেই উদবিগ্ন স্নেহে আনত তরুণ মুখের কোমলতামণ্ডিত উজ্জ্বলতা বিনয়ের চােখে সৃষ্টির সদ্যঃপ্রকাশিত একটি নূতন বিস্ময়ের মতো ঠেকিল । একটু পরে বৃদ্ধ অল্পে অল্পে চক্ষু মেলিয়া “মা” বলিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন। মেয়েটি তখন দুই চক্ষু ছলছল করিয়া বৃদ্ধের মুখের কাছে মুখ নিচু করিয়া আৰ্দ্ধস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, তোমার কোথায় লেগেছে ?” “এ আমি কোথায় এসেছি” বলিয়া বৃদ্ধ উঠিয়া বসিবার উপক্ৰম করিতেই বিনয় সম্মুখে আসিয়া কহিল, "উঠবেন না- একটু বিশ্রাম করুন, ডাক্তার আসছে।” তখন তাহার সব কথা মনে পড়িল ও তিনি কহিলেন, “মাথার এইখানটায় একটু বেদনা বোধ হচ্ছে, কিন্তু গুরুতর কিছুই নয়।” A9 সেই মুহুর্তেই ডাক্তার জুতা মচু মচু করিতে করিতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন ; তিনিও বলিলেন, “বিশেষ কিছুই নয়।” একটু গরম দুধ দিয়া অল্প ব্ৰাণ্ডি খাইবার ব্যবস্থা করিয়া ডাক্তার চলিয়া যাইতেই বৃদ্ধ অত্যন্ত সংকুচিত ও ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। তাহার মেয়ে তাহার মনের ভাব বুঝিয়া কহিল, “বাবা, ব্যস্ত হচ্ছে কেন ? ডাক্তারের ভিজিট ও ওষুধের দাম বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দেব।” বলিয়া সে বিনয়ের মুখের দিকে চাহিল। সে কী আশ্চর্যচক্ষু ! সে চক্ষু বড়ো কি ছােটাে, কালো কি কটা সে তর্ক মনেই আসে না- প্রথম নজরেই মনে হয়, এই দৃষ্টির একটা অসন্দিগ্ধ প্রভাব আছে। তাহাতে সংকোচ নাই, দ্বিধা নাই, তাহা একটা স্থির শক্তিতে পূর্ণ। বিনয় বলিতে চেষ্টা করিল, “ভিজিট অতি সামান্য, সেজন্যে- সে আপনারা- সে আমি-” মেয়েটি তাহার মুখের দিকে চাহিয়া থাকাতে কথাটা ঠিকমত শেষ করিতেই পারিল না। কিন্তু ভিজিটের টাকাটা যে তাহাকে লইতেই হইবে সে সম্বন্ধে কোনো সংশয় রহিল না । বৃদ্ধ কহিলেন, “দেখুন, আমার জন্যে ব্ৰাণ্ডির দরকার নেই-" dhu কন্যা তাহাকে বাধা দিয়া কহিল, “কেন বাবা, ডাক্তারবাবু যে বলে গেলেন।” । বৃদ্ধ কহিলেন, “ডাক্তাররা অমন বলে থাকে, ওটা ওদের একটা কুসংস্কার। আমার যেটুকু দুর্বলতা আছে একটু গরম দুধ খেলেই যাবে।” इ. ल ल ल श्या ’श्या व्या ३ या एका • মেয়েটি বিনয়ের মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “একটা গাড়ি—” বৃদ্ধ সংকুচিত হইয়া কহিলেন, “আবার কেন ওঁকে ব্যস্ত করা ? আমাদের বাসা তো কাছেই, এটুকু হেঁটেই যাব।” মেয়েটি বলিল, “না। বাবা, সে হতে পারে না।” বৃদ্ধ ইহার উপর কোনো কথা কহিলেন না এবং বিনয় নিজে গিয়া গাড়ি ডাকিয়া আনিল। গাড়িতে উঠিবার পূর্বে বৃদ্ধ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার নামটি কী ?”