পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8brQ অপমান কোরো না ।” Ն. দারোগ গরম হইয়া কহিল, “কিসের ভদ্রলোক ! উনি যে তোমাকে যা-খুশি তাই বললেন, সেটা বুঝি অপমান নয় ?” মাধব কহিল, “যা বলেছেন সে তো মিথ্যে বলেন নি, তা রাগ করলে চলবে কী করে ? নীলকুঠির সাহেবের গোমস্তাগিরি করে খাই, তার চেয়ে আর তো কিছু বলবার দরকার করে না। রাগ কোরো না দাদা, তুমি যে পুলিসের দারোগ, তোমাকে যমের পেয়াদা বললে কি গাল হয় ? বাঘ মানুষ মেরে খায়, সে বোষ্টম নয়, সে তো জানা কথা । কী করবে, তাকে তো খেতে হবে ।” বিনা প্রয়ােজনে মাধবকে রাগ প্রকাশ করিতে কেহ কোনােদিন দেখে নাই। কোন মানুষের দ্বারা কখন কী কাজ পাওয়া যায়, অথবা বক্র হইলে কাহার দ্বারা কী অপকার হইতে পারে তাহা বলা যায় কি ? কাহারও অনিষ্ট বা অপমান সে খুব হিসাব করিয়াই করিত— রাগ করিয়া পরকে আঘাত করিবার ক্ষমতার বাজে খরচ করিত না । দারোগা তখন গোরাকে কহিল, “দেখো বাপু, আমরা এখানে সরকারের কাজ করতে এসেছি, এতে যদি কোনো কথা বল বা গোলমাল কর তা হলে মুশকিলে পড়বে।” গোরা কোনো কথা না বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। মাধব তাড়াতাড়ি তাহার পশ্চাতে গিয়া কহিল, “মশায়, যা বলছেন সে কথাটা ঠিক— আমাদের এ কসাইয়ের কাজ— আর ঐ-যে বেটা 'দারোগা দেখছেন ওর সঙ্গে এক বিছানায় বসলে পাপ হয়— ওকে দিয়ে কত যে দুষ্কর্ম করিয়েছি তা মুখে উচ্চারণ করতেও পারি নে। আর বেশি দিন নয়- বছর দুত্তিন কাজ করলেই মেয়ে-কটার বিয়ে দেবার সম্বল করে নিয়ে তার পরে স্ত্রী-পুরুষে কাশীবাসী হব। আর ভালো লাগে না মশায়, এক-এক সময় ইচ্ছা হয়। গলায় দড়ি দিয়ে মারি ! যা হােক, আজ রাত্রে যাবেন কোথায় ? এইখানেই আহারাদি করে শয়ন করবেন । ও দারোগা বেটার ছায়া মাড়াতেও হবে না, আপনার জন্যে সমস্ত আলাদা বন্দোবস্ত করে দেব ।” গোরার ক্ষুধা সাধারণের অপেক্ষা অধিক- আজ প্রাতে ভালো করিয়া খাওয়াও হয় নাই— কিন্তু তাহার সর্বশরীর যেন জ্বলিতেছিল- সে কোনোমতেই এখানে থাকিতে পারিল না, কহিল, “আমার বিশেষ কাজ আছে।” মাধব কহিল, “তা, রসুন, একটা লণ্ঠন সঙ্গে দিই।” গোরা তাহার কোনো জবাব না করিয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেল । মাধব ঘরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “দাদা, ও লোকটা সদরে গেল। এইবেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে একটা লোক পাঠাও।” মাধব কহিল, “আর কিছু নয়, একবার কেবল জানিয়ে আসুক, একজন ভদ্রলোক কোথা থেকে এসে সাক্ষী ভাঙবার জন্যে চেষ্টা করে বেড়াচ্ছে।” ܘܓ হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে র্তাহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন। ব্ৰাউনলো সাহেব গার্ডন-পাটতে মাঝে মাঝে বাঙালি ভদ্রলোকদিগকে তাহার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করিতেন। জিলার এনট্রেন্স স্কুলে প্রাইজ বিতরণ উপলক্ষে তিনিই সভাপতির কাজ করিতেন। কোনাে সম্পন্ন লোকের বাড়িতে বিবাহাদি ক্রিয়াকর্মের্তাহাকে আহবান করিলে তিনি গৃহকর্তার অভ্যর্থনা গ্ৰহণ করিতেন। এমন-কি, যাত্রাগানের মজলিসে আহূত হইয়া তিনি একটা বড়ো কেদারায় বসিয়া কিছুক্ষণের জন্য ধৈর্যসহকারে গান শুনিতে চেষ্টা করিতেন। র্তাহার আদালতে গবর্মেন্ট প্লাডারের