পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত ° じ述 দেবতারই ধান । শিশুর ক্ষুদ্র মুখখানির মধ্যে এমনকী আছে যাহা নিরীক্ষণ করিয়া দেখিবার জন্য, যাহা পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করিবার জন্য, অরণ্যের নিরালার মধ্যে গমন করিতে ইচ্ছা হয়— মনে হয়, সমস্ত সংসার সমস্ত নিত্যনৈমিত্তিক ক্রিয়াকর্ম, এই আনন্দভাণ্ডার হইতে চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিতেছে। যোগীগণ যে অমৃতলালসায় পানাহার ত্যাগ করিয়া অরণ্যের মধ্যে অক্ষুব্ধ অবসর অন্বেষণ করিতেন, জননী নিজের সন্তানের মুখে সেই দেবদুর্লভ অমৃত্যুরসের সন্ধান প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাই তাহার অন্তরের উপাসনামন্দির হইতে এই গাথা উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছে— ধনকে নিয়ে বনকে যাব, সেখানে খাব কী । নিরলে বসিয়া চাঁদের মুখ নিরাখি ৷ সেইজন্য ছড়ার মধ্যে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়, নিজের পুত্রের সহিত দেবকীর পুত্রকে অনেক স্থলেই মিশাইয়া ফেলা হইয়াছে। অন্য দেশের মনুষ্যে দেবতায় এরূপ মিলাইয়া দেওয়া দেবাপমান বলিয়া গণা হইত ; কিন্তু আমার বিবেচনায়, মনুষের উচ্চতম মধুরতম গভীরতম জীবন্ত সম্বন্ধ-সকল হইতে দেবতাকে সুদূরে স্বতন্ত্র করিয়া রাখিলে মনুষ্যত্বকেও অপমান করা হয় এবং দেবত্বকেও আদর করা হয় না। আমাদের ছড়ার মধ্যে মর্তের শিশু স্বর্গের দেবপ্রতিমার সঙ্গে যখন-তখন এক হইয়া যাইতেছে— সেও অতি সহজে, অতি অবহেলে- তাহার জন্য স্বতন্ত্র চালচিত্রেরও আবশ্যক হইতেছে না । শিশু-দেবতার অতি অদ্ভুত অসংগত অর্থহীন চালচিত্রের মধ্যেই স্বর্গের দেবতা কখন অলক্ষিতে শিশুর সহিত মিশিয়া আপনি আসিয়া দাড়াইতেছেন। খোকা যাবে বেড় করতে তেলিমগীদের পাড়া । তেলিমগীরা মুখ করেছে কেন রে মাখনা-রা- "ভাড় ভেঙেছে, ননি খেয়েছে, আর কি দেখা পাব । কদমতলায় দেখা পেলে বঁাশি কেড়ে নেব ।” হঠাৎ, তেলিমগীদের পাড়ায় ক্ষুদ্র খোকাবাবু কখন যে বৃন্দাবনের বাঁশি আনিয়া ফেলিয়াছেন তাহা সে আমি ছড়াকে মেঘের সহিত তুলনা করিয়াছি। উভয়েই পরিবর্তনশীল, বিবিধ বর্ণে রঞ্জিত, বায়ুস্রোতে যদুচ্ছভাসমান ! দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক ; ছড়াও কলাবিচার-শস্ত্রের বাহির, মেঘবিজ্ঞানও শাস্ত্ৰনিয়মের মধ্যে ভালো করিয়া ধরা দেয় নাই । অথচ জড় জগতে এবং মানবজগতে এই দুই উদ্ধৃঙ্খল অদ্ভুত পদার্থ চিরকাল মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করিয়া আসিতেছে। মেঘ বারিধারায় নামিয়া আসিয়া শিশু-শস্যকে প্ৰাণদান করিতেছে এবং ছড়াগুলিও মেহরসে বিগলিত হইয়া কল্পনাবৃষ্টিতে শিশু-হৃদয়কে উর্বর করিয়া তুলিতেছে | লঘুকায় বন্ধনহীন মেঘ আপন লঘুত্ব এবং বন্ধনহীনতাগুণেই জগদব্যাপী হিতসাধনে স্বভাবতই উপযোগী হইয়া উঠিয়াছে, এবং ছড়াগুলিও ভারহীনতা অর্থবন্ধনশূন্যতা এবং চিত্রবৈচিত্র্য -বশতই চিরকাল ধরিয়া শিশুদের মনােরঞ্জন করিয়া আসিতেছে— শিশুমনােবিজ্ঞানের কোনো সূত্র সম্মুখে ধরিয়া রচিত হয় নাই। আশ্বিন-কার্তিক ১৩০১ কতকগুলি পাঠান্তর- ১ অন্নবাঞ্জন ২ - হেন प्रछेबा ११७१ 3 १७७ পৃ ৭৬৭, ৩ নয় = নাহয় অথবা নয় যে ?