পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডে মুদ্রিত গ্রন্থগুলির প্রথম সংস্করণ, অন্যান্য বিশেষ সংস্করণ, বর্তমানে স্বতন্ত্র গ্রন্থাকারে প্রচলিত সংস্করণ, রবীন্দ্র-রচনাবলী-সংস্করণ, ইহাদের পার্থক্য সংক্ষেপে ও সাধারণভাবে নির্দেশ করা গেল । রবীন্দ্র-রচনাবলীর বিভিন্ন গ্রন্থে ভূমিকা ও সূচনাগুলি রবীন্দ্র-রচনাবলীর জন্য কবি-কর্তৃক নূতন লিখিত । বিশ্বভারতী-প্রচলিত রবীন্দ্র-রচনাবলীর পঞ্চম ও ষষ্ঠ খণ্ড বর্তমান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হইল। চৈতালি চৈতালি ১৩০৩ সালে সত্যপ্ৰসাদ গঙ্গোপাধ্যায় -প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থাবলীর অন্তর্গত হইয়া প্রকাশিত হয় । কবি চৈতালি , সম্বন্ধে লিখিয়াছেন “চৈতালি-শীর্ষক কবিতাগুলি লেখকের সর্বশেষের লেখা । তাহার অধিকাংশই চৈত্রমাসে লিখিত বলিয়া বৎসরের শেষ উৎপন্ন শস্যের নামে তাহার নামকরণ করিলাম।” —ভূমিকা। কাব্যগ্রন্থাবলী ছিন্নপত্রের একটি চিঠিতে ‘কৰ্ম কবিতাটি রচনার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে।-- ‘মনে আছে সাজাদপুরে থাকতে সেখানকার খানসামা একদিন সকালে দেরি করে আসাতে আমি রাগ করেছিলুম ; সে এসে তার নিত্যনিয়মিত সেলামটি করে ঈষৎ অবরুদ্ধ কণ্ঠে বললে, কাল রাত্রে আমার আট বছরের মেয়েটি মারা গেছে। এই বলে ঝাড়নটি কঁধে করে আমার বিছানাপত্র ঝাড়পোছ করতে গেল।” —শিলাইদা। ১৪ অগস্ট ১৮৯৫ “সাহিত্যের পথে গ্রন্থে কবি প্রসঙ্গান্তরে এই ঘটনাটির উল্লেখ করিয়াছেন — ‘ছিলেম মফস্বলে, সেখানে আমার এক চাকর ছিল, তার বুদ্ধি বা চেহারা লক্ষ্য করবার যোগ্য ছিল না। রাত্রে বাড়ি চলে যায়, সকালে এসে ঝাড়ন কঁধে কাজকর্ম করে। তার প্রধান গুণ, সে কথা বেশি বলে না। সে যে আছে সে তথ্যটা অনুভব করলুম। যেদিন সে হল অনুপস্থিত। সকালে দেখি স্নানের জল তোলা হয় নি, ঝাড়পোছ বন্ধ। এল বেলা দশটার কাছাকাছি। বেশ একটু রূঢ়ম্বরে জিজ্ঞাসা করলুম, কোথায় ছিলি । সে বললে, আমার মেয়েটি মারা গেছে, কাল রাতে। ব'লেই ঝাড়ন নিয়ে নিঃশব্দে কাজে লেগে গেল। বুকটা ধক করে উঠল। ভৃত্যরূপে যে ছিল প্রয়ােজনীয়তার আবরণে ঢাকা, তার আবরণ উঠে গেল ; মেয়ের বাপ বলে তাকে দেখলুম, আমার সঙ্গে তার স্বরূপের মিল হয়ে গেল, সে হল প্রত্যক্ষ, সে হল বিশেষ। 'সুন্দরের হাতে বিধাতার পাসপাের্ট আছে, সর্বত্রই তার প্রবেশ সহজ। কিন্তু এই মােমিন মিঞা, একে কী বলব ? সুন্দর বলা তো চলে না। মেয়ের বাপও তো সংসারে অসংখ্য, সেই সাধারণ তথ্যটা সুন্দরও না অসুন্দরও না। কিন্তু সেদিন করুণরসের ইঙ্গিতে গ্রাম্য মানুষটা আমার মনের মানুষের সঙ্গে মিলল, প্রয়ােজনের বেড়া অতিক্রম করে কল্পনার ভূমিকায় মোমিন মিঞা আমার কাছে হল বাস্তব ।” —সাহিত্যতত্ত্ব । সাহিত্যের পথে হস্তাক্ষরে মুদ্রিত ছিল ; চৈতালির পরবর্তী বহু সংস্করণে এটি আর ব্যবহৃত হয় নাই। কবিতাটি VOG NR