পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ ՀՀԳ উপনন্দ। র্তার তো কিছুই নেই। ষে বীণা বাজিয়ে উপার্জন করে তোমার ঋণ শোধ করতেন সেই বীণাটি আছে মাত্র। লক্ষেশ্বর । বীণাটি আছে মাত্র। কী শুভ সংবাদটাই দিলে। , উপনন্দ । আমি শুভ সংবাদ দিতে আসি নি ! আমি একদিন পথের ভিক্ষুক ছিলেম, তিনিই আমাকে আশ্রয় দিয়ে তার বহুদুঃখের অল্পের ভাগে আমাকে মাস্থ্য করেছেন। তোমার কাছে দাসত্ব করে আমি সেই মহাত্মার ঋণ শোধ করব। লক্ষেশ্বর। বটে। তাই বুঝি তার অভাবে আমার বহুদুঃখের অন্নে ভাগ বসাবার মতলব করেছ। আমি তত বড়ে গর্দভ নই। আচ্ছা, তুই কী করতে পারিস বল দেখি ! উপনন্দ । আমি চিত্রবিচিত্র করে পুথি নকল করতে পারি। .তোমার অন্ন আমি • চাই নে। আমি নিজে উপার্জন করে যা পারি ধাব—তোমার ঋণও শোধ করব । লক্ষেশ্বর । আমাদের বানকারটিও যেমন নির্বোধ ছিল ছেলেটাকেও দেখছি ঠিক তেমনি করেই বানিয়ে গেছে। হতভাগা ছোড়াটা পরের দায় ঘাড়ে নিয়েই মরবে। এক-একজনের ওই-রকম মরাই স্বভাব।—আচ্ছ বেশ, মাসের ঠিক তিন তারিখের মধ্যেই নিয়মমতে টাকা দিতে হবে । নইলে— উপনন্দ । নইলে আবার কী ! আমাকে ভয় দেখাচ্ছে মিছে । আমার কী আছে যে তুমি আমার কিছু করবে। আমি আমার প্রস্তুকে স্মরণ করে ইচ্ছা করেই তোমার কাছে বন্ধন স্বীকার করেছি। আমাকে ভয় দেখিয়ে না বলছি । লক্ষেশ্বর। না না, ভয় দেখাব না। তুমি লক্ষ্মীছেলে, সোনার চাদ ছেলে। টাকাটা ঠিক মতো দিয়ে বাবা । নইলে আমার ঘরে দেবতা আছে তার ভোগ কমিয়ে দিতে । হবে—সেটাতে তোমারই পাপ হবে। [ উপনন্দের প্রস্থান ওই যে, আমার ছেলেট এইখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! আমি কোনখানে টাকা পুতে রাখি ও নিশ্চয় সেই খোজে ফেরে। ওদেরই ভয়েই তো আমাকে এক সুরঙ্গ হতে আর এক মুরঙ্গে টাকা বদল করে বেড়াতে হয়। ধনপতি, এখানে কেন রে! তোর মতলবট কী বল দেখি ! ধনপতি। ছেলেরা আজ সকলেই এই বেতসিনীর ধারে আমোদ করবে বলে আসছে,—আমাকে ছুটি দিলে আমিও তাদের সঙ্গে খেলি । লক্ষেশ্বর। বেতসিনীর ধারে! ওই রে খবর পেয়েছে বুঝি। বেতসিনীর ধারেই তো আমি সেই গজমোতির কোঁটো পুতে রেখেছি । ( ধনপতির প্রতি ) না না, খবরদার বলছি, সে-সব না। চল শীঘ্ৰ চল, নামত মুখস্থ করতে হবে।