পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇఏప్రి * রবীন্দ্র-রচনাবলী বাকি থাকে। সেই বাকিদেরই দেখেছি উজ্জ্বল আলোয়। তাদের অনেকের নাম থাকবে না কারও মনে, তবু তারা বড়ো ।” “এলী, তোমার কথা শুনে লজ্জা করছে, মনে হচ্ছে একটা প্রতিবাদ না করলে ভালো শোনাবে না। তবু ভালোও লাগছে। কিন্তু সত্য কথায় তোমার কাছে হারমানতে পারব না । আমাদের দেশের পুরুষদের যে কাপুরুষতার লক্ষণ ছেলেবেলা থেকে দেখেছি, যার কথা আমাকে বারবার ভাবিয়েছে সে আমি আজ তোমার কাছে বলব। আমি দেখেছি আমার জানা পরিবারের মধ্যে এবং আমার নিজের পরিবারেও শাশুড়ীর অসহ অন্যায় আধিপত্য । শাশুড়ীর অত্যাচারের কথা চিরকাল এদেশে প্রচলিত।” ' “ই সে তো জানি । নিজের ঘরে দেখেছি, যে-মানুষ হাড়ে দুর্বল, দুর্বলের যম সে— তার মতো নিষ্ঠুর কেউ হতে পারে না।” “এল, ও-কথা বলে তুমি তোমার ভাবী শাশুড়ীর নিন্দার ভূমিকা করে রেখে না । নববধূর পরে অমানুষিক অত্যাচারের খবর প্রায় শুনতে পাই, আর দেখি তার প্রধান নায়িকা শাশুড়ী । কিন্তু শাশুড়ীকে অপ্রতিহত অন্যায় করবার অধিকার দিয়েছে কে ? সে তো ওই মায়ের খোকার । অত্যাচারিণীর বিরুদ্ধে নিজের স্ত্রীর সন্ত্রম রাখবার শক্তি নেই যাদের সেই নাবালকদের কখনোই কি বিয়ে করবার বয়স হয় ? যখন হয় তখন তারা স্ত্রীর খোকা হয়ে ওঠে। যেখানে পুরুষের পৌরুষ দুর্বল সেখানেই মেয়েরা নেবে আসে আর নাবায় নীচতার দিকে । আজ দেখি আমাদের দেশে যারা বড়ো-কিছু করবার সংকল্প করে তারা মেয়েকে ত্যাগ করতে চায়—মেয়েকে ভয় করে সেই ন্ত্রৈণ কাপুরুষেরা। সেইজন্যেই এই কাপুরুষের দেশে তুমি পণ করেছ বিয়ে করবে না, পাছে কোনো কচি মন বেঁকে যায় তোমার মেয়েলি প্রভাবে । যথার্থ পুরুষ যারা, তারা যথার্থ মেয়ের জোরেই চরিতার্থ হবে—বিধাতার নিজের হাতের এই হকুমনাম আছে আমাদের রক্তে। যে সেই বিধিলিপিকে ব্যর্থ করে সে পুরুষ নামের যোগ্য নয়। পরীক্ষার ভার ছিল তোমার হাতে, আমাকে পরীক্ষা করে দেখলে না কেন ?” “অস্ত, তর্ক করতে পারতুম কিন্তু তোমার সঙ্গে তর্ক করব না। কেননা, জানি তুমি নিতান্ত ক্ষোভের মুখে এই সব কুযুক্তি পেড়েছ। আমার পণের কথা কিছুতেই ভুলতে পরিছ না ।” r “না ভুলতে পারব না। তুমি বললে কি না, পুরুষের মন্ত বড়ো, মেয়ের তাদের ছোটো করবে এই তোমার ভয় ! মেয়েদের বড়ো হবার দরকারই হয় না। তারা যতটুকু ততটুকুই সুসম্পূর্ণ। হতভাগা ষে-পুরুষ বড়ে নয় সে অসম্পূর্ণ, তার জন্তে সৃষ্টিকর্তা লজ্জিত ।”