পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় গায়ে গায়ে ঠেসাঠেলি ফিকে-সবুজ গাঢ়-সবুজ হলদে-সবুজ ভ্রাউন-সবুজ রঙের গুন্মে বনস্পতিতে জড়িত নিবিড়ত, বাশপাতা-পচা পাকের স্তরে ভরে-ওঠা ডোবা ; তারই পাশ দিয়ে আঁকাবঁকা গলি, গোরুর গাড়ির চাকায় বিক্ষত। ওল, কচু, ঘেটু, মনসা,* মাঝে মাঝে আস্শেওড়ার বেড়া । কচিং ফাকের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় আল দিয়ে বাধা কচিধানের খেতে জল দাড়িয়েছে। গলি শেষ হয়েছে গঙ্গার ঘাটে । সেকালের ছোটাে ছোটাে ইট দিয়ে গাথা ভাঙা ফাটা ঘাট কাত হয়ে পড়েছে তলায় চর পড়ে গঙ্গা গেছে সরে, কিছুদূরে তীরে ঘাট পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা পুরোনো ভাঙা বাড়ির অভিশপ্ত ছায়ায় দেড়শ বছর আগেকার মাতৃহত্যাপাতকীর ভূত আশ্রয় নিয়েছে বলে জনপ্রবাদ । অনেককাল কোনো সজীব স্বত্বাধিকারী সেই অশরীরীর বিরুদ্ধে আপন দাবি স্থাপনের চেষ্টামাত্র করে নি। দৃশুটা এইখানকার পরিত্যক্ত পুরোনো পুজোর দালান, তার সামনে শেওলা-পড়া রাবিশে এবড়োখেবড়ো প্রশস্ত আঙিনা । কিছুদূরে নদীর ধারে ভেঙে-পড়া দেউল, ভাঙ রাসমঞ্চ, প্রাচীন প্রাচীরের ভগ্নাবশেষ, ভাড়ায় তোলা পাজর বের-করা ভাঙা নোঁকে ঝুরি-নামা বটগাছের অন্ধকার তলায় । এইখানে দিনের শেষ প্রহরে অতীনের বর্তমান বাসস্থানে ছায়াচ্ছন্ন দালানে প্রবেশ করল কানাই গুপ্ত। চমকে উঠল অতীন, কেননা এখানকার ঠিকানা কানাইয়েরও জানবার কথা ছিল না।” 漸 “আপনি যে ” কানাই বললে, “গোয়েন্দাগিরিতে বেরিয়েছি।” “ঠাট্টাটা বুঝিয়ে দেবেন।” “ঠাট্ট নয়। আমি তোমাদের রসদ-জোগানদারদের সামান্য একজন চায়ের দোকানে শনি প্রবেশ করলে ; বেরিয়ে পড়লুম। সঙ্গে সঙ্গে চলল ওদের কুদৃষ্টি। শেষকালে ওদেরই গোয়েন্দার খাতায় নাম লিপিয়ে এলুম। নিমতলা ঘাটের রাস্ত ছাড়া কোনো রাস্তা নেই যাদের সামনে, তাদের পক্ষে এটা গ্র্যাও ট্রাঙ্ক রোড, দেশের বুকের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বরাবর লম্বমান।” “চা বানানো ছেড়ে খবর বানাচ্ছেন ?” “বানালে এ ব্যবসা চলে না। বিশুদ্ধ খাটি খবরই দিতে হয়। যে-শিকার জালে পড়েইছে আমি তার ফাস টেনে দিই। তোমাদের হয়েনের সাড়ে পনেরো জানা খবর ওদের কাছে পৌঁছোল, শেষ বাহুল্য খবরটা আমি দিয়েছি। সে এখন জলপাইগুড়িতে । সরকারি ধর্মশালায় ।” ( ,