পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ළු89) . রবীন্দ্র-রচনাবলী করুণার মধ্যে একান্তভাবে আত্মবিসর্জন করিতে পারি। ইহা যেন মনে রাখি-জীবনকে তুমিই আমার প্রিয় করিয়াছিলে, মরণকেও তুমিই আমার প্রিয় করিবে—তোমার দক্ষিণহস্তে তুমি আমাকে সংসারে প্রেরণ করিয়াছিলে, তোমার বামহস্তে তুমি আমাকে ক্রোড়ে আকর্ষণ করিয়া লইবে,—তোমার আলোক আমাকে শক্তি দিয়াছিল, তোমার অন্ধকার আমাকে শান্তি দিবে। ওঁ শাস্তি: শাস্তি: শাস্তি: У ФУ о মনুষ্যত্ব “উত্তিষ্ঠত ! জাগ্রত !” উত্থান করে, জাগ্রত হও—এই বাণী উদঘোষিত হইয়া গেছে। আমরা কে শুনিয়াছি, কে শুনি নাই, জানি না—কিন্তু “উত্তিষ্ঠত, জাগ্ৰত” এই বাক্য বারবার আমাদের দ্বারে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। সংসারের প্রত্যেক বাধা প্রত্যেক দুঃখ প্রত্যেক বিচ্ছেদ কতশতবার আমাদের অন্তরাত্মার তীতে তন্ত্রীতে আঘাত দিয়া ষে-ঝংকার দিয়াছে, তাহাতে কেবল এই বাণীই ঝংকৃত হইয়া উঠিয়াছে—“উত্তিষ্ঠত, জাগ্রত,”—উত্থান করে, জাগ্রত হও । অশ্রুশিশিরধোঁত আমাদের নবজাগরণের জন্ত নিধিল অনিমেষনেত্রে প্রতীক্ষা করিয়া আছে—কবে সেই প্রভাত আসিবে, কবে সেই রাত্রির অন্ধকার অপগত হইয়া আমাদের অপূর্ব বিকাশকে নির্মল নবোদিত অরুণালোকে উদঘাটিত করিয়া দিবে। কবে আমাদের বহুদিনের বেদন সফল হইবে, আমাদের অশ্রধারা সার্থক হইবে । পুষ্পকে আজ প্রাতঃকালে বলিতে হয় নাই যে, রজনী প্রভাত হইল—তুমি আজ প্রস্ফুটিত হইয়া ওঠা ! বনে বনে আজ বিচিত্র পুপগুলি অতি অনায়াসেই বিশ্বজগতের অন্তগূঢ় আনন্দকে বর্ণে গন্ধে শোভায় বিকশিত করিয়া মাধুর্ষের দ্বারা নিধিলের সহিত কমনীয়ভাবে আপনার সম্বন্ধস্থাপন করিয়াছে। পুষ্প আপনাকেও পীড়ন করে নাই, অন্ত কাহাকেও আঘাত করে নাই, কোনো অবস্থায় দ্বিধার লক্ষণ দেখায় নাই, সহজসার্থকতায় আদ্যোপাস্ত প্রফুল্ল হইয়া উঠিয়াছে। ইহ দেখিয়া মনের মধ্যে এই আক্ষেপ জন্মে যে, আমার জীবন কেন বিশ্বব্যাপী আনন্কিরণপাতে এমনি সহজে, এমনি সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হইয় উঠে না ? সে তাহার সমস্ত দলগুলি সংকুচিত করিয়া আপনার মধ্যে এত প্রাণপণে কী আঁকড়িয়া রাখিতেছে ? প্রভাতে তরুণ স্বর্য আসিয়া অরণকরে তাহার দ্বারে আঘাত করিতেছে, বলিতেছে, “আমি যেমন করিয়া আমার চম্পক-কিরণরাজি সমস্ত আকাশময় মেলিয়া