পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 8૭૭ ত্যাগের ফল কিন্তু ত্যাগ কেন করব এ প্রশ্নটার চরম উত্তরটি এখনও মনের মধ্যে এসে পৌঁছোল না। শাস্ত্রে উত্তর দেয় ত্যাগ না করলে স্বাধীন হওয়া যায় না, যেটিকে ত্যাগ না করব সেইটিই আমাদের বদ্ধ করে রাখবে—ত্যাগের দ্বারা আমরা মুক্ত হব। মুক্তিলাভ করব এ কথাটার জোর ষে আমাদের কাছে নেই। আমরা তে মুক্তি চাচ্ছি নে ; আমাদের ভিতরে যে অধীনতার একটা বিষম ঝোক আছে—আমরা যে ইচ্ছা করে খুশি হয়ে সংসারের অধীন হয়েছি—আমরা ঘটিবাট থালার অধীন, আমরা তৃত্যেরও অধীন, আমরা কথার অধীন, প্রথার অধীন, অসংখ্য প্রবৃত্তির অধীন— এতবড়ো জন্ম-অধীন দাসাচুদাসকে এ কথা বলাই মিথ্যা যে, মুক্তিতে তোমার সার্থকতা আছে ; ষে ব্যক্তি স্বভাবত এবং স্বেচ্ছাক্রমেই বদ্ধ তাকে মুক্তির প্রলোভন দেখানে भिषTां । বস্তুত মুক্তি তার কাছে শূন্তত, নির্বাণ, মরুভূমি । যে মুক্তির মধ্যে তার ঘর-ছয়ার ঘটিবাটি টাকাকড়ি কিছুই নেই, ষা কিছুকে সে একমাত্র আশ্রয় বলে জানত তার সমস্তই বিলুপ্ত—সে মুক্তি তার কাছে বিভীষিকা, বিনাশ । - আমরা যে ত্যাগ করব তা যদি শূন্ততার মধ্যেই ত্যাগ হয় তবে সে তো একেবারেই লোকসান। একটি কানাকড়িকেও সেই রকম শূন্যের মধ্যে বিসর্জন দেওয়া আমাদের পক্ষে একেবারে অসহ । কিন্তু ত্যাগ তো শূন্যের মধ্যে নয়। যদ যদ কর্ম প্রকুবীত তব্রেহ্মণি সমৰ্পয়েৎ— যা কিছু করবে সমস্তই ব্রহ্মে সমর্পণ করবে। তোমার সংসারকে তোমার প্রিয়জনকে তোমার সমস্ত কিছুকেই তাকে নিবেদন করে দাও—এই যে ত্যাগ এ যে পরিপূর্ণতার মধ্যে বিসর্জন । পূর্ণের মধ্যে যাকে ত্যাগ করি তাকেই সত্যরূপে পূর্ণরূপে লাভ করি এ কথা পূর্বেই বলেছি। কিন্তু এতেও কথা শেষ হয় না। কেবলমাত্র লাভের কথায় কোনো কথার সমাপ্তি হতে পারে না—লাভ করে কী হবে এ প্রশ্ন থেকে যায়। স্বাধীন হয়েই বা কী হবে, পূর্ণতা লাভ করেই বা কী হবে ? i যখন কোনো ছেলেকে পয়সা দিই সে জিজ্ঞাসা করতে পারে পয়সা নিয়ে কী হবে ? উত্তর দি দিই বাজারে বাবে তাহলেও প্রশ্ন এই ষে বাজারে গিয়ে কী হবে ? পুতুল কিনবে । পুতুল কিনে কী হবে ? খেলা করবে। খেলা করে কী হবে ? তখন একটি উত্তরে সব প্রশ্নের শেষ হয়ে যায়—খুশি হবে। খুশি হয়ে কী হবে এ প্রশ্ন কেউ