পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9Y SR রবীন্দ্র-রচনাবলী পুরুষের ব্ৰত মেয়ের বঁাধন কাটিয়ে স্বৰ্গলোকের রান্তা বানানো। কচ বেরিয়ে পড়েছিল দেবযানীর অনুরোধ এড়িয়ে, আর আপনি মায়ের অনুনয়- একই কথা।” আমি বললুম, “দেখুন, আমি হয়তো ভুল করেছিলুম। মেয়েদের নিয়ে পুরুষের কাজ যদি না চলে তা হলে মেয়েদের সৃষ্টি কেন।” অচিরা বললে, “বারো-আনার চলে, মেয়েরা তাদের জন্যেই। কিন্তু বাকি মাইনরিটি যারা সব কিছু পেরিয়ে নতুন পথের সন্ধানে বেরিয়েছে তাদের চলে না। সাব-পেরোবার মানুষকে মেয়েরা যেন চোখের জল ফেলে রান্তা ছেড়ে দেয়। যে দুৰ্গম পথে মেয়ে পুরুষের চিরকালের দ্বন্ত্ব সেখানে পুরুষেরা হােক জয়ী । যে মেয়েরা মেয়েলি, প্রকৃতির বিধানে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি, তারা ছেলে মানুষ করে, সেবা করে ঘরের লোকের। যে পুরুষ যথার্থ পুরুষ, তাদের সংখ্যা খুব কম ; তারা অভিব্যক্তির শেষ কোঠায়। মাথা তুলছে দুটি-একটি করে। মেয়েরা তাদের ভয় পায়, বুঝতে পারে না, টেনে আনতে চায় নিজের অধিকারের গণ্ডিতে। এই তত্ত্ব শুনেছি। আমার দাদুর কাছে।” “দাদু, তোমার পড়া রেখে আমার কথা শোনো। মনে আছে, তুমি একদিন বলেছিলে, পুরুষ যেখানে অসাধারণ সেখানে সে নিরতিশয় একলা, নিদারুণ তার নিঃসঙ্গতা, কেননা, তাকে যেতে হয় যেখানে কেউ পৌঁছয় নি। আমার ডায়ারিতে লেখা আছে।” অধ্যাপক মনে করবার চেষ্টা করে বললেন, “বলেছিলুম নাকি ? হয়তো বলেছিলুম।” অচিরা খুব বড়ো কথাও কয় হাসির ছলে, আজ সে অত্যন্ত গভীর। খানিক বাদে আবার সে বললে, “দেবযানী কচকে কী অভিসম্পাত দিয়েছিল জানেন ?” " | “বলেছিল, “তোমার সাধনায় পাওয়া বিদ্যা তোমার নিজের ব্যবহারে লাগাতে পারবে না ।” যদি এই অভিসম্পাত আজ দিত দেবতা যুরোপকে, তা হলে য়ুরোপ বেঁচে যেত। বিশ্বের জিনিসকে নিজের মাপে ছোটাে করেই ওখানকার মানুষ মরছে লোভের তাড়ায়। সত্যি কি না বলে দাদু।” “খুব সত্যি, কিন্তু এত কথা কী করে ভাবলে ।” “নিজের বুদ্ধিতে না। একটা তোমার মহাদগুণ আছে, কখন কাকে কী যে বল, ভোলানাথ তুমি সব ভুলে যাও । “তাই চোরাই মালের উপর নিজের ছাপ লাগিয়ে দিতে ভাবনা থাকে না।” আমি বললুম, “নিজের ছাপ যদি লাগে তা হলেই অপরাধ খণ্ডন হয়।” “জানেন, নবীনবাবু, ওঁর কত ছাত্র ওঁর কত মুখের কথা খাতায় টুকে নিয়ে বই লিখে নাম করেছে। উনি তাই পড়ে আশ্চর্য হয়ে প্রশংসা করেছেন, বুঝতেই পারেন নি নিজের প্রশংসা নিজেই করছেন। কোন কথা আমার কথা আর কোন কথা ওঁর নিজের সে ওঁর মনে থাকে না- লোকের সামনে আমাকে বলে বসেন ওরিজিনাল, তখন সেটার প্রতিবাদ করার মতো মনের জোর পাওয়া যায় না । স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নবীনবাবুরও এ ভ্ৰম ঘটছে। কী করবো বলো, আমি তো কোটেশন মার্ক দিয়ে দিয়ে কথা বলতে পারি। নে ৷” “নবীনবাবুর এ ভ্রম কোনোদিন ঘুচিবে না।” অচিরা বললে, “দাদু একদিন আমাদের কলেজ-ক্লাসে কাচ ও দেবযানীর ব্যাখ্যা করছিলেন । কচ হচ্ছে পুরুষের প্রতীক, আর দেবযানী মেয়ের। সেই দিন নির্মম পুরুষের মহৎ গীেরব মনে মনে। মেনেছি, মুখে ককখনো স্বীকার করি নে।” মৃত্যু বললেন, কিন্তু পদ আমার কোনো কথায় মেয়েদের গৌরবের আমি কোনোদিন লাঘব “তুমি আবার করবে। হায় রে। মেয়েদের তুমি যে অন্ধভক্ত। তোমার মুখের স্তবগান শুনে মনে মনে হাসি। মেয়েরা নির্লজ হয়ে সব মেনে নেয়। তার উপরেও বুক ফুলিয়ে সতীসান্ধীগিরির বড়ই করে নিজের মুখে ৷ সন্তায় প্রশংসা আত্মসাৎ করা ওদের অভ্যোস হয়ে গেছে।” অধ্যাপক বললেন, “না দিদি, অবিচার কোরো না। অনেক কাল ওরাহীনতা সহ্য করেছে, হয়তো