পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা । w99ዒ ভুল স্বৰ্গ লোকটি নেহাত বেকার ছিল । তার কোনো কাজ ছিল না, কেবল শখ ছিল নানা রকমের । ছোটাে ছোটাে কাঠের চৌকোয় মাটি ঢেলে তার উপরে সে ছােটাে ছোটাে ঝিনুক সাজাত। দূর থেকে দেখে মনে হত যেন একটা এলোমেলো ছবি, তার মধ্যে পাখির বঁােক ; কিংবা এবড়ো-খেবড়ো মাঠ, সেখানে গোরু চরছে ; কিংবা উচুনিচু পাহাড়, তার গা দিয়ে ওঠা বুঝি ঝরনা হবে, কিংবা 에T-5 커 | বাড়ির লোকের কাছে তার লাঞ্ছনার সীমা ছিল না। মাঝে মাঝে পণ করত পাগলামি ছেড়ে দেবে, কিন্তু পাগলামি তাকে ছাড়িত না । R কোনাে কোনাে ছেলে আছে সারা বছর পড়ায় ফাকি দেয়, অথচ পরীক্ষায় খামক পাস করে । ( ।। ७: (न प्र शक्ता | সমস্ত জীবনটা অকাজে গেল, অথচ মৃত্যুর পরে খবর পেলে যে, তার স্বর্গে যাওয়া মঞ্জুর । কিন্তু, নিয়তি স্বর্গের পথেও মানুষের সঙ্গ ছাড়ে না। দূতগুলো মার্কা ভুল করে তাকে কেজো লোকের স্বৰ্গে রেখে এল । এই স্বৰ্গে আর সবই আছে, কেবল অবকাশ নেই । এখানে পুরুষরা বলছে, “ইফ ছাড়বার সময় কোথা ।” মেয়েরা বলছে, "চললুম, ভাই, কাজ রয়েছে পড়ে।” সবাই বলে, “সময়ের মূল্য আছে।” কেউ বলে না, “সময় অমূল্য ।” “আর তো পারা যায় না” বলে সবাই আক্ষেপ করে, আর ভারি খুশি হয় । “খেটে খেটে হয়রান হলুম।” এই নালিশটাই সেখানকার সংগীত । এ বেচারা কোথাও ফাক পায় না, কোথাও খাপ খায় না । রাস্তায় অন্যমনস্ক হয়ে চলে, তাতে ব্যস্ত লোকের পথ আটক করে । চাদরটি পেতে যেখানেই আরাম ক'রে বসতে চায়, শুনতে পায় সেখানেই ফসলের খেত, বীজ পোতা হয়ে গেছে । কেবলই উঠে যেতে হয়, সরে যেতে হয় । V ভারি এক ব্যস্ত মেয়ে স্বগের উৎস থেকে রোজ জল নিতে আসে । পথের উপর দিয়ে সে চলে যায় যেন সেতারের দ্রুত তালের গতের মতো । তাড়াতাড়ি সে এলো-খোপা বেঁধে নিয়েছে। তবু দু-চারটে দুরন্ত অলক কপালের উপর ঝুঁকে পড়ে তার চোখের কালো তারা দেখবে ল’লে উকি মারছে । স্বগীয় বেকার মানুষটি এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, চঞ্চল ঝরনার ধারে তমালগাছটির মতো স্থির । জানলা থেকে ভিক্ষুককে দেখে রাজকন্যার যেমন দয়া হয়, একে দেখে মেয়েটির তেমনি দয়া হল । “আহা, তোমার হাতে বুঝি কাজ নেই ?” নিশ্বাস ছেড়ে বেকার বললে, “কাজ করব তার সময় নেই।” মেয়েটি ওর কথা কিছুই বুঝতে পারলে না। বললে, “আমার হাত থেকে কিছু কাজ নিতে চাও ?” বেকার বললে, “তোমার হাত থেকেই কাজ নেব বলে দাড়িয়ে আছি।” “কী কাজ দেব ।” “তুমি যে ঘড়া কাখে করে জল তুলে নিয়ে যাও তারই একটি যদি আমাকে দিতে পাের।” “ঘড়া নিয়ে কী হবে । জল তুলবো ?”