পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা। Ֆ8Գ নইলে ছন্দ মেলে না, ইতিহাসের পদটা খোড়া হয়েই থাকে । দেশে যত শিরোমণি চূড়ামণি আছে। সবাইকে জিজ্ঞাসা করা গেল, “এমন হল কেন ।” তারা এক বাক্যে শিখা নেড়ে বললে, “এটা ভূতের দোষ নয়, ভূতুড়ে দেশের দোষ নয়, একমাত্র বর্গিরই দোষ । বগি আসে কেন ।” শুনে সকলেই বললে, “তা তো বটেই ।” অত্যন্ত সাত্মনা বোধ করলে । দোষ যারই থাক, খিড়কির আনাচে-কানাচে ঘোরে ভূতের পেয়াদা, আর সদরের রান্তায়-ঘাটে ঘোরে অভূতের পেয়াদা ; ঘরে গোরস্তর টেকা দায়, ঘর থেকে বেরোবারও পথ নেই। এক দিক থেকে এ স্থাকে, “খাজনা দাও।” আর-এক দিক থেকে ও ইকে, “খাজনা দাও।” এখন কথাটা দাড়িয়েছে ‘খাজনা দেব কিসে । এতকাল উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিম থেকে বঁাকে বঁাকে নানা জাতের বুলবুলি এসে বেবাক ধান খেয়ে গেল, কারো। ছশ ছিল না । জগতে যারা ইশিয়ার এরা তাদের কাছে ঘেঁষতে চায় না, পাছে প্ৰায়শ্চিত্ত করতে হয় । কিন্তু, তারা অকস্মাৎ এদের অত্যন্ত কাছে যেবে, এবং প্রায়শ্চিত্তও করে না । শিরোমণি-চূড়ামণির দল পুঁথি খুলে বলেন, “বোঁশ যারা তারাই পবিত্র, ইশিয়ার যারা তারাই অশুচি, অতএব ইশিয়ারদের প্রতি উদাসীন থেকে, প্রবুদ্ধমিব সুপ্তঃ ।” VSGR KPGg VNOJVS VIINow 'R | (ł কিন্তু, তৎসত্ত্বেও এ প্রশ্নকে ঠেকানো যায় না। ‘খাজনা দেব কিসে।। শ্মশান থেকে মশান থেকে ঝোড়ো হাওয়ায় হাহা করে তার উত্তর আসে, “আৰু দিয়ে, ইজত দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।” প্রশ্নমাত্রেরই দোষ এই যে, যখন আসে এক আসে না। তাই আরো একটা প্রশ্ন উঠে পড়েছে, "ভূতের শাসনটাই কি অনন্তকাল চলবে ।” শুনে ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি আর মাসতুতো-পিসতুতোর দল কানে হাত দিয়ে বলে, “কী সর্বনাশ ! এমন প্রশ্ন তো বাপের জন্মে শুনি নি। তা হলে সনাতন ঘুমের কী হবে- সেই আদিমতম, সকল জাগরণের চেয়ে প্রাচীনতম ঘুমের ?” প্ৰশ্নকারী বলে, “সে তো বুঝলুম, কিন্তু আধুনিকতম বুলবুলির বঁােক আর উপস্থিততম ব্যগির দল, এদের কী করা যায়।” . মাসিপিসি বলে, “বুলবুলির বঁাককে কৃষ্ণনাম শোনাব, আর বর্গির দলকেও।” অর্বািচীনেরা উদ্ধত হয়ে বলে ওঠে, “যেমন করে পারি। ভূত ছাড়াব।” ভূতের নায়েব চোখ পাকিয়ে বলে, “চুপ । এখনো ঘানি অচল হয় নি।” শুনে দেশের খোকা নিস্তব্ধ হয়, তার পরে পাশ ফিরে শোয় । Ve মোদ্দা কথাটা হচ্ছে, বুড়ে কর্তা বেঁচেও নেই, মরেও নেই, ভূত হয়ে আছে। দেশটাকে সে নাড়েও Rt, web vritye at দেশের মধ্যে দুটা-একটা মানুষ, যারা দিনের বেলা নায়েবের ভয়ে কথা কয় না, তারা গভীর রাত্রে হাত জোড় করে বলে, “কর্তা, এখনো কি ছাড়বার সময় হয় নি।” কর্তা বলেন, “ওরে অবোধ, আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।” তারা বলে, “ভয় করে যে কর্তা ।” কর্তা বলেন, “সেইখানেই তো ভুত।” Reyes