পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S) (2 byr রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, “তোমার কন্যার সঙ্গে কৌশিকের বিবাহে বিলম্ব উচিত নয়।” মন্ত্রী বললে, “মহারাজ, আমার কন্যা এ বিবাহে অনিচ্ছুক।” রাজা বললেন, “স্ত্রীলোকের মনের ইচ্ছা কি মুখের কথায় বোঝা যায় ।” মন্ত্রী বললে, “তার চোখের জলও যে সাক্ষ্য দিচ্ছে।” । রাজা বললেন, “ সে কি মনে করে কৌশিক তার অযোগ্য ।” মন্ত্রী বললে, “ই, সেই কথাই বটে ।” রাজা বললেন, “আমার সামনে দুজনের বিদ্যার পরীক্ষা হােক। কৌশিকের জয় হলে এই বিবাহ সম্পন্ন হবে ।” পরদিন মন্ত্রী রাজাকে এসে বললে, “এই পণে আমার কন্যার মত আছে ।” 8 বিচারসভা প্ৰস্তুত । রাজা সিংহাসনে বসে, কৌশিক তঁর সিংহাসনতলে । স্বয়ং অধ্যাপক রুচিকে সঙ্গে করে উপস্থিত হলেন । কৌশিক আসন ছেড়ে উঠে তাকে প্ৰণাম ও রুচিকে নমস্কার করলে। রুচি দৃকপাত করলে না । কোনোদিন পাঠশালার রীতিপালনের জন্যেও কৌশিক রুচির সঙ্গে তর্ক করে নি । অন্য ছাত্রেরাও অবজ্ঞা করে তাকে তর্কের অবকাশ দিত না । তাই আজ যখন তার যুক্তির মুখে তীক্ষ বিদ্রুপ তীরের ফলায় আলোর মতো ঝিকমিক করে উঠল তখন গুরু বিস্মিত হলেন, এবং বিরক্ত হলেন । রুচির কপালে ঘাম দেখা দিল, সে বৃদ্ধি, স্থির রাখতে পারেল না। কীেশিক তাকে পরাভাবের শেষ কিনারায় নিয়ে গিয়ে তবে ছেড়ে দিলে । ক্ৰোধে অধ্যাপকের বাকরোধ হল, আর রুচির চোখ দিয়ে ধারা বেয়ে জল পড়তে লািগল । রাজা মন্ত্রীকে বললেন, “এখন বিবাহের দিন স্থির করে ।" ୩ !" রাজা বিস্মিত হয়ে বললেন, “জয়লব্ধ পুরস্কার গ্রহণ করবে না ?” কৌশিক বললে, “জয় আমারই থাক, পুরস্কার অন্যের হোক ৷” অধ্যাপক বললেন, “মহারাজ, আর এক বছর সময় দিন, তার পরে শেষ পরীক্ষা ।” সেই কথাই স্থির হল । ( কৌশিক পাঠশালা ত্যাগ করে গেল । কোনোদিন সকালে তাকে বনের ছায়ায়, কোনোদিন সন্ধ্যায় তাকে পাহাড়ের চূড়ার উপর দেখা যায়। এ দিকে রুচির শিক্ষায় অধ্যাপক সমস্ত মন দিলেন । কিন্তু, রুচির সমস্ত মন কোথায় । অধ্যাপক বিরক্ত হয়ে বললেন, “এখনো যদি সতর্ক না হও তবে দ্বিতীয়বার তোমাকে লজ্জা পেতে হবে ।” দ্বিতীয়বার লজ্জা পাবার জন্যেই যেন সে তপস্যা করতে লািগল । অপর্ণার তপস্যা যেমন অনশনের, রুচির তপস্যা তেমনি অনধ্যায়ের। ষড়দর্শনের পুঁথি তার বন্ধই রইল, এমন-কি, কাব্যের পুঁথিও দৈবাৎ খোলা হয় । অধ্যাপক রাগ করে বললেন, "কপিল-কণাদের নামে শপথ করে বলছি আর কখনো স্ত্রীলোক ছাত্র নেব না। বেদবেদান্তের পার পেয়েছি, স্ত্রীজাতির মন বুঝতে পারলেম না।” একদা মন্ত্রী এসে রাজাকে বললে, “ভবদ্যুত্তর বাড়ি থেকে কন্যার সম্বন্ধ এসেছে। কুলে শীলে ধনে মানে তারা অদ্বিতীয় । মহারাজের সম্মতি চাই ।”