পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిజం রবীন্দ্র-রচনাবলী নতুন আর পুরোনো হতে পেল কই । ইচতে ইচতে বসতিটা বেবাক ফাকি হয়ে গেছে। পড়ে আছে জালা-জালা সবুজ নাস্যি। ব্যবহার করবার যোগ্য নাক বাকি নেই একটাও । এ তোমার আগাগোড়াই বানানো । বিজ্ঞানের ঠাট্টার পক্ষেও এটা বাড়াবাড়ি শোনাচ্ছে। এই হাউ দ্বীপের ইতিহাস বানিয়ে তুমি পুপেদিদিকে তাক লাগিয়ে দিতে চাও ! ঠিক করেছিলে, তোমার এই অভাগা সে-নামওয়ালাকেই বৈজ্ঞানিক সাজিয়ে সারা দ্বীপময় ইচিয়ে ইচিয়ে মারবে । বৰ্ণনা করবে: আমি ঘাড়-নাড়ােনাড়ির ঘটাকরে ঘটােৎকচ-বধা পাচলির আসার জমাছি কী করে। হয়তো কোন হামাগুড়িওয়ালি মনোহর-ঘাড়-নাড়ানির সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে বসবে, ঘাড়নাড়-ময়ে কনে নাড়বে মাথা বা দিক থেকে ডান দিকে, আর আমি নাড়ব ডান দিক থেকে বা দিকে । সপ্তপদী-গমন হয়ে উঠবে চতুর্দশপদী। ওদের সেনেট হলে ঘাড়নাড়া ভাষায় যখন ওরা সারে সারে পরীক্ষা দিতে বসেছে, তার মধ্যে আমাকেও বসাবে এক কোণে । আমার উপর তোমার দয়ামায়া নেই, দেবে ফেল করিয়ে । কিন্তু ওদের স্পোটিং ক্লাবে হামাগুড়ি-রেসে আমাকেই পাওয়াবে ফাস্ট প্রাইজ। বলে দিচ্ছি, পূপেদিদিকে এমন করে হাসাতে পারবে মনেও কোরো না । বেশি বোকো না। চাণক্যপণ্ডিত শ্রেণীবিশেষের আয়ুবৃদ্ধির জন্যে বলেছেন : তাবাচ্চ বাঁচতে মুৰ্থ যাবৎ ন বক্‌বকায়তে - তুমি তো সংস্কৃত কিছু শিখেছিলে ? যতটা শিখেছিলেম ভুলেছি তার দেড়গুণ ওজনে। নয়া-চাণক্য জগতের হিতের জন্যে যে উপদেশ দিয়েছেন সেটাও তোমার জানা দরকার দাদা, ছন্দ মিলিয়েই লেখা ; তখন ইপ ছাড়িয়া বঁচি যখন পণ্ডিত চুপায়তে - চললুম। আমার শেষ পরামর্শ এই বৈজ্ঞানিক রসিকতা ছেড়ে দিয়ে ছেলেমানুবি করে যতটা পার । এই কাহিনীটা পুপেদিদির কাছে একটুও পছন্দসই হয় নি। কপাল কুঁচকে বললে, এ কখনো হয় ? নাস্যি নিয়ে পেট ভরে ? আমি বললেম, গোড়াতে পেটটাকেই যে সরিয়ে দিয়েছে। পুপূদিদি আখন্ত হয়ে বললে, ওঃ, তাই বুধি । শেষ পর্যন্ত, ওর গিয়ে ঠেকােল কথা না বলতে । ওর প্রশ্ন, কথা না বলে কি বাচা যায় । আমি বললুম, ওদের সব চেয়ে বড়ো পণ্ডিত ভূৰ্জপাতায় লিখে লিখেৰীপময় প্রচার করেছেন, কথা বলেই মানুষ মরে। তিনি সংখ্যাগণনায় প্রমাণ করে দিয়েছেন, যারা কথা বলত সবাই মরেছে।