পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 RV রবীন্দ্র-রচনাবলী বেরিয়েছে ব্ৰহ্মার হাসি থেকে । আর তোমার রঙ তার ঠাট্টার হাসি থেকে । একেই বলে অন্যোন্যস্তুতি, মুচুয়ল অ্যাডমিরেশন । পিতামহের দুই জাতের হাসি আছে- একটা দন্ত্য, একটা মূর্ধন্য। আমাতে লেগেছে মূর্ধন্য হাসি, ইংরেজিতে তাকে বলে উইট । দাদামশায়, নিজের গুণগান তোমার মুখে কখনো বাধে না । * সেইটেই আমার প্রধান গুণ। আপনাকে যারা জানে আমি সেই অসামান্যের দলে । মুখ খুলে গেছে, কিন্তু আর নয়, এবার থামো। মাস্টারমশায়ের কথা হচ্ছিল, এখন উঠে পড়ল তোমার নিজের কথা । তাতে দোষ হয়েছে কী । বিষয়টা তো উপাদেয়, যাকে বলে ইন্টারেস্টিঙ | বিষয়টা সর্বদাই রয়েছে সামনে । তাকে তো স্মরণ করবার দরকার হয় না । তাকে যে ভোলাই V6 | আচ্ছা, তা হলে মাস্টারের একটা বিশেষ পরিচয় দিই তোমাকে । এটা টুকে রাখবার যোগ্য : একদিন সন্ধেবেলায় মাস্টার জনকয়েক লোককে নেমস্তন্ন করেছিল । খবরটা তার মনে আছে কি না জানিবার জন্যে সকাল-সকাল গেলুম তার বাড়িতে । সেবক কানাইয়ের সঙ্গে তার যে আলোচনাটা চলছিল, বলি সে কথাটা । কানাই বললে, জগদ্ধাত্রীপুজোর বাজারে গলদা চিংড়ির দাম চড়ে গেছে, তাই এনেছি ডিমওয়ালা কঁকড়া । মাস্টার ঈষৎ চিন্তিত হয়ে বলে, কঁকড়া কী হবে । ও বললে, লাউ দিয়ে ঝোল, সে তোফা হবে । আমি বললুম, মাস্টার, গলদা চিংড়ির উপর তোমার লোভ ছিল ? মাস্টার বললে, ছিল বৈকি । তা হলে তো লোভ সংবরণ করতে হবে । তা কেন । লোভটা প্ৰস্তুত হয়েই আছে, তাকে শান্ট করে চালিয়ে দেব কঁকড়ার লাইনে । দেখছি, তোমাকে বিস্তর শান্ট করতে হয়। মাস্টার বললে, কঁকড়ার ঝোল তো খেয়েছি অনেকবার, সম্পূর্ণ মন দিইনি। এবার যখন দেখলাম কানাইয়ের জিভে জল এসেছে, তখন তার সিক্ত রসনার নির্দেশে খাবার সময় মনটা ঝুকে পড়বে কঁকড়ার দিকে, রসটা পাব বেশি করে । কঁকড়ার ঝোলটাকে ও যেন লাল পেনসিলে আন্ডারলাইন করে দিলে ; ওটাকে ভালো করে মুখস্থ করবার পক্ষে সুবিধে হল আমার । মাস্টার জিগেস করলে, আঁঠি-বাধা ওটা কী এনেছিস । কানাই বললে, সজনের উত্পাট । মাস্টার সগৰ্বে আমার দিকে চেয়ে বললে, এই দেখো মজা ৷৷ ও বাজারে যাবার সময় আমার মনে সুপ্রিল ৩ হাজার থেকেবাের এল আর পর গেন্দ্রসঙ্গলে ওটা। ভ্ৰমন কের ঐ 8 | আমি বললুম, সজনের উীটা না এনে ও যদি আনত চিচিঙ্গে ? মাস্টার জবাব দিলেন, তা হলে ক্ষণকালের জন্যে ভাবনা করতে হত । নাম জিনিসটার প্রভাব আছে। চিচিঙ্গে শব্দটা লোভজনক নয়। কিন্তু, কানাই যদি ওটা বিশেষ করে বাছাই করে আনত, তা হলে সংস্কার কাটাবার একটা উপলক্ষ হত। জীবনে সাব-প্ৰথমে ভেবে দেখবার সুযোগ হত “দেখাই যাক না ; হয়তো আবিষ্কার করতুম, ওটা মন্দ চলে না। চিচিঙ্গে পদার্থটার বিরুদ্ধে অন্ধ বিরাগ দূর হয়ে উপভোগ্যের সীমানা বেড়ে যেত। এমনি করেই কাব্যে কবিরা তো নিজের রুচিতে আমাদের রুচির প্রসার বাড়িয়ে দিচ্ছে। সৃটিকে আন্ডারলাইন করাই তাদের কাজ । তোমার রুচির প্রসার বাড়াবার কাজে কানাইয়ের আরো এমন হাত আছে ?