পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় @\°凉 আরো অনেক নাক্ষত্ৰলোকের ঠিকানা পাওয়া গেল। শুধু তাই নয়, নক্ষত্রেরা যে সবাই মিলে আমাদের নক্ষত্ৰ-আকাশে এবং দূরতর আকাশে ঘূর খাচ্ছে তাও ধরা পড়েছে এই যমের দৃষ্টিতে। দর আকাশের কোনো জ্যোতির্ময় গ্যাসের পিণ্ড, যাকে বলে নক্ষত্র, যখন সে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে কিংবা পিছিয়ে যায় তখন আমাদের দৃষ্টিতে একটা বিশেষত্ব ঘটে। ঐ পদার্থটি স্থির থাকলে যো-পরিমাণ দৈর্ঘ্যের আলোর ঢেউ আমাদের অনুভূতিতে পৌঁছিয়ে দিতে পারত কাছে এলে তার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের ধারণা জন্মায়, দূরে গেলে তার চেয়ে বেশি। যে-সব আলোর ঢেউ দৈর্ঘ্যে কম, তাদের রঙ ফোটে বর্ণসপ্তকের বেগনির দিকে, আর যারা দৈর্ঘ্যে বেশি তারা পেঁৗছয় লাল রঙের কিনারায় । এই কারণে নক্ষত্রের কাছে-আসা দূরে-যাওয়ার সংকেত ভিন্ন রঙের সিগন্যালে জানিয়ে দেয়। বর্ণলিপি। শিঙে বাজিয়ে রেলগাড়ি পাশ দিয়ে চলে যাবার সময় কানে তার আওয়াজ পূর্বের চেয়ে চড়া ঠেকে । কেননা শৃঙ্গধর্মনি বাতাসে যে ঢেউ-তোলা আওয়াজ আমাদের কানে বাজায়, গাড়ি কাছে এলে সেই ঢেউগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে কানে চড়া সুরের অনুভূতি জাগায় । আলোতে চড়া রঙের সপ্তক বেগনির দিকে । , r কোনো কোনো গ্যাসীয় নীহারিকার যে উজ্জ্বলতা সে তার আপনি আলোতে নয়। যে নক্ষত্রগুলি তাদের মধ্যে ভিড় করে আছে তারাই ওদের আলোকিত করেছে। আবার কোথাও নীহারিকার পরমাণুগুলি নক্ষত্রের আলোককে নিজেরা শুষে নিয়ে ভিন্ন দৈর্ঘ্যের আলোতে তাকে চালান করে। নীহারিকার আর-একটি বিশেষত্ব দেখতে পাওয়া যায়। তার মাঝে মাঝে মেঘের মতো কালো কালো লেপ দেওয়া আছে, নিবিড়তম তারার ভিড়ের মধ্যে এক-এক জায়গায় কালো ফাক । জ্যোতিষী বার্নার্ডের পর্যবেক্ষণে এমনতরো প্রায় দুশোটা কালো আকাশ-প্রদেশ দেখা দিয়েছে। বার্নার্ড অনুমান করেন এগুলি অস্বচ্ছ গ্যাসের মেঘ, ওর পিছনের তারাগুলিকে ঢেকে রেখেছে। কোনোটা কাছে, কোনোটা দূরে, কোনোটা ছোটাে, কোনোটা প্ৰকাণ্ড বড়ো । নক্ষত্ৰলোকের অনুবতী আকাশে যে বস্তুপুঞ্জ ছড়িয়ে আছে তার নিবিড়তা হিসাব করলে জানা যায় যে সে অত্যন্ত কম, প্রত্যেক ঘন-ইঞ্চিাতে আধা ডজন মাত্র পরমাণু। সে যে কত কম। এই বিচার করলে বােঝা যাবে যে, বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে সব চেয়ে জোরের পাম্প দিয়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি করা হয় তার মধ্যেও ঘন-ইঞ্চিতে বহু কোটি পরমাণু বাকি থেকে যায়। আমাদের আপনি নক্ষত্ৰলোকটি প্রকাণ্ড একটা চ্যাপটা ঘুরপাক-খাওয়া জগৎ, বহু শত কোটি নক্ষত্রে পূর্ণ । তাদের মধ্যে মধ্যে যে আকাশ তাতে অতি সূক্ষ্ম গ্যাস কোথাও বা অত্যন্ত বিরল, কোথাও বা অপেক্ষাকৃত ঘন, কোথাও বা উজ্জ্বল, কোথাও বা অস্বচ্ছ । সূর্য আছে এই নক্ষত্ৰলোকের কেন্দ্র থেকে তার ব্যাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দূরে, একটা নক্ষত্রমেঘের মধ্যে । নক্ষত্রগুলির বেশি ভিড় নীহারিকার কেন্দ্রের কাছে। অ্যান্টারীজ নক্ষত্রের ব্যাস উনচল্লিশ কোটি মাইল, আর সূর্যের বাস আট লক্ষ চৌষট্টি হাজার মাইল । সূৰ্য মাঝারি বহরের তারা বলেই গণ্য। যে নক্ষত্র জগতের একটি মধ্যবিত্ত তারা এই সূর্য, তার মতো এমন আরো আছে লক্ষ লক্ষ জগৎ । সব নিয়ে এই যে ব্ৰহ্মাণ্ড কোথায় তার সীমা তা আমরা জানি নে । আমাদের সূর্য তার সব গ্রহগুলিকে নিয়ে ঘুর খাচ্ছে আর তার সঙ্গেই ঘুরছে এই নক্ষত্রচক্রাবতীর *ব তারাই, একটি কেন্দ্রের চার দিকে। এই মহলে সূর্যের ঘূর্ণিপাকের গতিবেগ এক সেকেন্ডে প্রায় শৈী মাইল । চলতি চাকার থেকে ছিটকে পড়া কাদার মতোই সে ঘোরার বেগে নাক্ষত্রচক্র থেকে ইটকে পড়ত ; এই চক্রের হাজার কোটি নক্ষত্র ওকে টেনে রাখছে, সীমার বাইরে যেতে দেয় না। এই টানের শক্তির খবরটা নিশ্চয়ই পাঠকদের জানা। তবু সেটা এই বিশ্ববৰ্ণনা থেকে বাদ দিলে চলবে না । সত্য হােক মিথ্যে হোক একটা গল্প চলিত আছে যে, বিজ্ঞানীশ্ৰেষ্ঠ নু্যটন একদিন দেখতে পেলেন একটা আপেল ফল গাছ থেকে পড়ল, তখনই তঁর মনে প্রশ্ন উঠল ফিলটা নীচেই বা পড়ে কেন, , V n J - r a