পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ofüდik. şiლდზე চলিতেছিল। ইহা বিশেষ কোনো উপার্জন বা লাভের ব্যাপার নাহে ; ইহা কোনো বিশেষ বিষয়ের বই পড়া বা কলেজের বক্তৃতা শোনার কাজ করে না ; ইহা মনের চলার আনন্দ । যেমন বসন্তে সমস্তই কেবল ফল ও ফুল নহে, তাহর সঙ্গে দক্ষিণের হাওয়া আছে, সেই হাওয়ার উত্তাপে ও আন্দোলনে ফুলের আনন্দবিকাশ সম্পূর্ণ হইতে থাকে, তেমনি এখানকার মনোবিকাশের চারি দিকে যে একটা আলাপের বসন্তহাওয়া বহিতেছে, যাহাতে গন্ধ ব্যাপ্ত হইতেছে ও বীজ ছড়াইয়া পড়িতেছে, যাহাতে প্রাণের ক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণের উৎসব দিগদিগন্তয়কে মাতাইয়া তুলিতেছে, এই সহৃদয় চিন্তাশীল অধ্যাপকের গ্রন্থমণ্ডিত বাসাটুকুর মধ্যে আমি তাঁহারই একটি প্রবল স্পর্শ পাইলাম। ইহার সঙ্গে এক সময়ে যখন এখানকার একজন বিখ্যাত গণিত-অধ্যাপক রাসেলসাহেব’ আসিয়া মিলিত হইলেন তখন তঁহাদের আলাপের আন্দোলন আমার মনকে পদে পদে অভিহিত করিয়া আনন্দিত করিয়া তুলিল । গণিতের তেজে কাহারও মন দগ্ধ হইয়া শুকাইয়া যায়, কাহারও মন আলোকিত হইয়া উঠে। রাসেল সাহেবের মন যেন প্রখর আলোকে দীপ্যমান। সেই চিন্তার আলোকের সঙ্গে সঙ্গে অপৰ্যাপ্ত হাস্যরশ্মি মিলিত হইয়া আছে, সেইটো আমার কাছে সবচেয়ে সরস লাগিল । রাত্রে আহারের পর আমরা কলেজের রাগানে গিয়া বসিতাম। সেখানে একদিন রাত্রি এগারোটা পর্যন্ত প্ৰাচীন তরুসিভার গভীর নীরবতার মধ্যে এই দুই অধ্যাপক বন্ধুর আলাপ আমি শুনিতেছিলাম। আলাপের বিষয় বহুদূরব্যাপী । তাহার মধ্যে সাহিত্য, সমাজতত্ত্ব, দর্শন, সকলেরকম জিনিসই ছিল। আমার কাছে সেই রাত্রির স্মৃতিটি বড়ো রমণীয়। এক দিকে বিরাট বিশ্বপ্রকৃতির আকাশ-জোড়া নিস্তান্ধতা, আর-এক দিকে তাহারই মাঝখান দিয়া মানুষের চঞ্চল মন আপনার তরঙ্গমালা বিস্তার করিয়া সমস্ত বিশ্বকে বাহুবন্ধনে বধিবার জন্য অভিসারে চলিয়াছে! যেন পর্বতমালা স্থির নিশ্চল গান্তীর্যের সহিত আকাশ ভেদ করিয়ার্দাড়াইয়া আছে, আর তাহারই পায়ের কাছটা ঘিরিয়া ঘিরিয়া নিঝরিণী ছুটিয়া চলিয়াছে, তাহাকে কেহই থামাইয়া রাখিতে পারিতেছে না ; তাহার কালোচ্ছাস কেবলই প্রশ্ন করিতেছে, এবং গভীর গিরিকন্দিরগুলা তাহারই ধ্বনিপ্ৰতিধ্বনিতে মুখরিত হইয়া উঠিতেছে। প্রকৃতি এবং চিত্ত এই দুইয়ের যোগ আমি সেই প্রাচীন বিদ্যালয়ের পুরাতন বাগানে বসিয়া অনুভব করিতেছিলাম। বৃহৎ বিশ্বের নীরবতা মানুষের মধ্যেই বাণী-আকারে আপনাকে অবিশ্রাম প্রকাশ করিতেছে ; এই বাণীস্রোতেই বিশ্বের আত্মোপলব্ধি, তাহার নিরন্তর আনন্দ, ইহাই আমি সেদিন নিবিড়রাপে উপলব্ধি করিলাম। আমার মনে হইতে লাগিল, জগতে অন্ধকারের মহাসত্তা অতিবিপুল । অনন্ত আকাশে সেই মহান্ধকার আপনাকে আলোকের লীলায় ব্যক্তি করিতেছে ; সেই আলোকের আবর্ত চঞ্চল, তাহ সর্বদা কম্পমান ; তাহা কোথাও বা শিখায়, কোথাও বা স্মৃলিঙ্গে, কোথাও বা ক্ষণকালের জন্য, কোথাও বা দীর্ঘকালের জন্য উজ্জ্বল হইয়া উঠিতেছে ; কিন্তু এই চঞ্চল আলোকমালাই অবিচলিত মহৎ অন্ধকারের বাণী । মানুষের চিত্তের চঞ্চল ধারাটিও তেমনি বিশাল বিশ্বের এক প্রান্ত দিয়া নানা পথে আঁকিয়া-বাকিয়া নানা শাখা-প্ৰশাখায় বিভক্ত হইয়া কেবলই বিশ্বকে প্রকাশ করিতে করিতে চলিয়াছে। যেখানে সেই প্রকাশ পরিপূর্ণ ও প্রশস্ত সেইখানেই বিশ্বের চরিতার্থতা আনন্দে ও ঐশ্বর্যের সমারোহে উৎসবময় হইয়া উঠিতেছে। নিস্তািন্ধ রাত্রে দুই বন্ধুর মৃদু কণ্ঠের কথাবার্তায় আমি মানুষের মনের মধ্যে সমস্ত বিশ্বের সেই আনন্দ, সেই ঐশ্বৰ্য अनूख्य कrिउश्लािभ । S ris trr (Bertrand Russel)