পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S >br রবীন্দ্র-রচনাবলী মন ভরিয়া উঠিল। তার মনে হইল, সাধনা আরও অনেক বেশি কঠোর হওয়া চাই । এতদিন এবং পৌষ মাসটাতে যে কম্বল সে গায়ে দিতেছিল এখনি সেটা ফেলিয়া দিতেই শীতে তার গায়ে কাট দিয়া উঠিল। ষোড়শীর মনে হইল, সেই লংচু পাহাড়ের হাওয়া তাৱ গায়ে আসিয়া লাগিতেছে । হাত জোড় করিয়া চোখ বুজিয়া সে বসিয়া রহিল, চোখের কোণ দিয়া অজস্র জল পড়িতে লাগিল । সেইদিনই মধ্যাহ্নে আহারের পর মাখন ষোড়শীকে তার ঘরে ডাকিয়া আনিয়া বড়োই সংকোচের সঙ্গে বলিলেন, “মা, এতদিন তোমার কাছে বলি লি, ভেবেছিলুম, দরকার হবে না, কিন্তু আর চলছে না। আমার সম্পত্তির চেয়ে আমার দেনা অনেক বেড়েছে, কোনদিন আমার বিষয় ক্রোক করে বলা যায় না।” ষোড়শীর মুখ আনন্দে দীপ্ত হইয়া উঠিল । তার মনে সন্দেহ রহিল ন যে, এ-সমস্তই তার স্বামীর কাজ । তার স্বামী তাকে পূর্ণভাবে আপন সহধর্মিণী করিতেছেন— বিষয়ের যেটুকু ব্যবধান মাঝে ছিল সেও বুঝি এবার ঘুচাইলেন। কেবল উত্তরে হাওয়া নয়, এই-যে দেন এও সেই লংচু পাহাড় হইতে আলিয়া পৌছিতেছে ; এ তার স্বামীরই দক্ষিণ হাতের স্পর্শ । * সে হাসিমুখে বলিল, “ভয় কী, বাবা।” মাখন বলিলেন, “আমরা দাড়াই কোথায় ?” ষোড়শী বলিল, “নৈমিষারণ্যে চালা বেঁধে থাকব ।” মাখন বুঝিলেন, ইহার সঙ্গে বিষয়ের আলোচন। বৃথা । তিনি বাহিরের ঘরে বসিয়া চুপ করিয়া তামাক টানিতে লাগিলেন। এমন সময়ে মোটর গাড়ি দরজার কাছে আসিয়া থামিল । সাহেবি কাপড়-পরা এক যুবা টপ করিয়া লাফাইয়া নামিয়। মাখনের ঘরে আসিয়া একটা অত্যন্ত অসম্পূর্ণ ভাবের নমস্কারের চেষ্টা করিয়া বলিল, “চিনতে পারছেন না ?” "এ কী । বরদ নাকি (* বরদা জাহাজের লস্কর হইয়া আমেরিকায় গিয়াছিল । বারে বংসর পরে সে অtঞ্জ কোন এক কাপড়-কাচা কল-কোম্পানির ভ্রমণকারী এজেণ্ট হইয়া ফিরিয়াছে। বাপকে বলিল, “আপনার যদি কাপড়-কাচ কলের দরকার থাকে খুব সস্তায় ক’রে দিতে পারি।” বলিয়া ছবি-আঁকা ক্যাটলগ পকেট হইতে বাহির করিল। 8खTछै, ०७२8