পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২ রবীন্দ্র-রচনাবলী বলে খোলা রাস্ত না থাকাই ভালো—রাস্তা পেলেই প্রজার বেরিয়ে চলে যাবে। এ-দেশে উলটো, যেতেও কেউ ঠেকায় না, আসতেও কেউ মানা করে না—তবু মানুষও তো ঢের দেখছি—এমন খোলা পেলে আমাদের রাজ্য উজাড় হয়ে যেত । প্রথম। ওহে জনাৰ্দন, তোমার ওই একটা বড়ো দোষ । জনাৰ্দন। কী দোষ দেখলে ? প্রথম। নিজের দেশের তুমি বড়ে নিন্দে কর। খোলা রাস্তাটাই বুঝি ভালো হল? বলে তো ভাই কৌণ্ডিল্য, খোলা রাস্তাটাকে বলে কিনা ভালো । কৌশুিল্য। ভাই ভবদত্ত, বরাবরই তো দেখে আসছ জনাদনের ওই একরকম তাড়া বুদ্ধি। কোন দিন বিপদে পড়বেন–রাজার কানে যদি যায় তাহলে মলে ওঁকে শ্মশানে ফেলবার লোক খুজে পাবেন না। ভবদত্ত। আমাদের তো ভাই এই খোলা রাস্তার দেশে এসে অবধি পেয়ে-শুয়ে মুখ নেই—দিনরাত গা-বিনষিন করছে। কে আসছে কে যাচ্ছে তার কোনো ঠিকঠিকানাই নেই—রাম রাম ! কৌশুিল্য। সে-ও তো ওই জনাদনের পরামর্শ শুনেই এসেছি। আমাদের গুষ্টিতে এমন কখনো হয় নি। আমার বাবাকে তো জান—কতবড়ো মহাত্মালোক ছিল— শাস্ত্রমতে ঠিক উনপঞ্চাশ হাত মেপে গণ্ডি কেটে তার মধ্যেই সমস্ত জীবনটা কাটিয়ে দিলে—একদিনের জন্যে তার বাইরে পা ফেলে নি । মৃত্যুর পর কথা উঠল ওই উনপঞ্চাশ হাতের মধ্যেই তো দাহ করতে হয় ; সে এক বিষম মুশকিল ; শেষকালে শাস্ত্রী বিধান দিলে যে, উনপঞ্চাশে যে দুটো অঙ্ক আছে তার বাইরে যাবার জো নেই, অতএব ওই চার নয় উনপঞ্চাশকে উলটে নিয়ে নয় চার চুরানব্বই করে দাও—তবেই তো তাকে বাড়ির বাইরে পোড়াতে পারি, নইলে ঘরেই দাহ করতে হত। বাবা, এত আটার্তাটি ! এ কি যে-সে দেশ পেয়েছ । ভবদত্ত। বটেই তো, মরতে গেলেও ভাবতে হবে, এ কি কম কথা ! কৌণ্ডিল্য। সেই দেশের মাটিতে শরীর, তবু জনাৰ্দন বলে কিনা, গোলা রাস্তাই ভালো । [ প্রস্থান বালকগণকে লইয়া ঠাকুরদার প্রবেশ ঠাকুরদ। ওরে দক্ষিনে হাওয়ার সঙ্গে সমান পাল্লা দিতে হবে—হার মানলে চলবে না—আজ সব রাস্তাই গানে ভাসিয়ে দিয়ে চলব।