পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8૨ রবীন্দ্র-রচনাবলা নেই যে আমার সঙ্গে মিলবে ? একলা—একলা আমি । আমার এতবড়ো ত্যাগ গ্রহণ করে নেবার জন্যে কেউ এক পাও বাড়াবে না ? স্বরঙ্গমা। একলা তুমি ন—একলা না। সুদৰ্শনা । সুরঙ্গমা তোর কাছে সত্যি করে বলছি, আমাকে পাবার জন্যে প্রাসাদে আগুন লাগিয়েছিল এতেও আমি রাগ করতে পারি নি—ভিতরে ভিতরে আনন্দে আমার বুক কেঁপে কেঁপে উঠছিল। এতবড়ে অপরাধ ! এতবড়ো সাহস ! সেই সাহসেই আমার সাহস জাগিয়ে দিলে, সেই আনন্দেই আমার সমস্ত ফেলে দিয়ে আসতে পারলুম। কিন্তু সে কি কেবল আমার কল্পনা ? আজ কোথাও তার চিহ্ন দেখি না কেন ? সুরঙ্গম । তুমি যার কথা মনে ভাবছ সে তো আগুন লাগায় নি--আগুন লাগিয়েছিল কাঞ্চীরাজ । 幽 இ সুদৰ্শন ৷ ভীরু ! ভীরু ! অমন মনোমোহন রূপ—তার ভিতরে মানুষ নেই। এমন অপদার্থের জন্যে নিজেকে এতবড়ো বঞ্চনা করেছি ? লজ্জা ! লজ্জা ! কিন্তু সুরঙ্গমা, তোর রাজার কি উচিত ছিল না আমাকে এখনও ফেরাবার জন্যে আসে ? ( সুরঙ্গমা নিরুত্তর ) তুই ভাবছিস ফেরবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি ! কপনো না ! রাজা এলৈও আমি ফিরতুম না। কিন্তু সে একবার বারণও করলে না। চলে যাবার দ্বার একেবারে পোলা রইল। বাইরের নিরাবরণ রাস্তা রানী বলে আমার জনো একটু বেদনা বোধ করলে না ? সেও তোর রাজার মতোই কঠিন ? দীনতম পথের ভিক্ষকও তার কাছে যেমন আমিও তেমনি। চুপ করে রইলি যে । বল না তোর রাজার এ কা রকম ব্যবহার । সুরঙ্গমা। সে তো সবাই জানে—আমার রাজা নিষ্ঠুর, কঠিন, তাকে কি কেউ কোনোদিন টলাতে পারে ? সুদৰ্শনা। তবে তুই তাকে দিনরাত্রি এমন ডাকিস কেন ? সুরঙ্গম । সে যেন এইরকম পর্বতের মতোই চিরদিন কঠিন থাকে-আমার কান্নায় আমার ভাবনায় সে যেন টলমল না করে। আমার দুঃখ আমারই থাক সেই কঠিনেরই জয় হ’ক । সুদৰ্শন। সুরঙ্গম, দেখ তো ওই মাঠের পারে পূর্বদিগন্তে যেন ধুলো উড়ছে। সুরঙ্গমা। হঁ। তাই তো দেখছি । সুদৰ্শন । ওই যে, রথের ধ্বজার মতো দেখাচ্ছে না । সুরঙ্গম । হা, ধ্বজাই তো বটে। সুদৰ্শন । তবে তো আসছে। তবে তো এল ।