পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8૭ রবীন্দ্র-রচনাবলী Q কাঞ্চী। যা ভয় করছিলুম তাই হল। সুদর্শনার পলায়নসংবাদ রটে গিয়েছে— এখন সকলে মিলে কাড়াকড়ি করে সকলকেই ব্যর্থ হতে হবে। সুবর্ণ। কাজ নেই মহারাজ ! এ-সমস্ত ভালো লক্ষণ নয়। আমি নিশ্চয় বলছি আমাদের রাজাই এই গোপন সংবাদটা রটিয়ে দিয়েছেন। { কাঞ্চী । কেন ? তাতে র্তার লাভ কী ? সুবর্ণ। লোভীরা পরস্পর কাটাকাটি ছেড়াছিড়ি করে মরবে—মাঝের থেকে যার ধন তিনিই নিয়ে যাবেন। কাকী। এখন বেশ বুঝছি কেন তোমাদের রাজা দেখা দেন না । ভয়ে তাকে সর্বত্রই দেখা যাবে এই তার কৌশল। কিন্তু এখনও আমি বলছি তোমাদের রাজ আগাগোড়াই ফাকি । সুবর্ণ। কিন্তু মহারাজ আমাকে ছেড়ে দিন । কাঞ্চী । তোমাকে ছাড়তে পারছি নে—তোমাকে এই কাজে আমার বিশেষ প্রয়োজন । সৈনিকের প্রবেশ সৈনিক । বিরাট পাঞ্চাল ও বিদর্ভরাজও এসেছেন । তাদের শিবির নদীর ওপারে । [ প্রস্থান কাঞ্চী । আরম্ভে আমাদের সকলকে মিলে কাজ করতে হবে । কান্তকুন্ডের সঙ্গে যুদ্ধটা আগে হয়ে যাক তার পরে একটা উপায় করা যাবে। সুবর্ণ। আমাকে ওই উপায়টার মধ্যে যদি না টানেন তাহলে নিশ্চিন্ত হতে পারি—আমি অতি হীনব্যক্তি—আমার দ্বারা— কাঞ্চী । দেখো হে ভগু, উপায় জিনিসটাই হচ্ছে হীন । সিড়ি বল রাস্ত বল পায়ের তলাতেই থাকে। উপায় যদি উচ্চশ্রেণীর হয় তাকে ব্যবহারে লাগাতে অনেক চিস্তার দরকার করে । তোমার মতো লোককে নিয়ে কাজ চালাবার সুবিধে এই যে কোনোপ্রকার ভণ্ডামি করতে হয় না । কিন্তু আমার মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে গেলেও চুরিকে লোকহিত নাম না দিলে শুনতে খারাপ লাগে। সুবর্ণ। কিন্তু দেখেছি মন্ত্রীমশায় কথাটার আসল অর্থ টাই বুঝে নেন। কাঞ্চী । এই ভাষাতত্ত্বটুকু তার জানা না থাকলে তাকে মন্ত্রী না করে গোয়ালঘরের ভার দিতুম । যাই, রাজাগুলোকে একবার বোড়ের মতে চেলে দিয়ে আসি গে – সকলেরই যদি রাজার চাল হয় তাহলে চতুরঙ্গ খেলা চলে না ।