পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী সুরঙ্গমা। এবার একেবারে হার মেনে তার কাছে যাও তাহলে আর লজ্জা থাকবে না । সুদৰ্শন। স্বীকার তো করতেই হবে চিরদিনের মতো আমার হার হয়ে গেছে— কিন্তু এতদিন গর্ব করে তার কাছে সকলের চেয়ে বেশি আদরের দাবি করে এসেছি কি না, সেটা একেবারে ছেড়ে দিতে পারছি নে। সবাই যে বলত আমার অনেক রূপ, অনেক গুণ, সবাই যে বলত আমার উপরে রাজার অল্প গ্রহের অস্ত নেই—সেইজন্যেই তো সকলের সামনে আমার হৃদয় নত হতে এত লজ্জা বোধ করছে । সুরঙ্গম । অভিমান না ঘুচলে তো লজ্জাও ঘুচবে না। সুদৰ্শন । তার কাছ থেকে আদর পাবার ইচ্ছ। যে কিছুতে মন থেকে ঘুঢতে চায় না । সুরঙ্গম। সব ঘুঢ়বে রানীম। কেবল একটি ইচ্ছা থাকবে, নিজেকে নিবেদন করবার ইচ্ছা । সুদৰ্শন । সেই আঁধার ঘরের ইচ্ছা—দেখা নয়, শোনা নয়, চাওয়া নয়, কেবল গভীরের মধ্যে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া ! সুরঙ্গম, সেই আশীৰ্বাদ কর যেন— সুরঙ্গম কী বল তুমি । আমি আশীবাদ করব কিসের ? সুদৰ্শন । সকলের কাছে নত হয়ে আমি আশীৰ্বাদ নেব। সবাহ বলত এত প্রসাদ রাজা আর কাউকে দেন নি। তাই শুনে হৃদয় এত শক্ত হয়েছে যে আমার রাজাকেও আঘাত করতে পেরেছি। এত শক্ত হয়েছে যে সুইতে লজ্জ করছে। এ লজ্জ কাটাতে হবে—সমস্ত পৃথিবীর কাছে নিচু হবার দিন আমার এসেছে। কিন্তু, কই রাজা এখনও কেন আমাকে নিতে আসছেন না ? আরও কিসের জন্যে তিনি অপেক্ষা করছেন ? সুরঙ্গম । আমি তো বলেছি আমার রাজা নিষ্ঠর-—বড়ে নিষ্ঠর । সুদৰ্শন । সুরঙ্গমা তুই যা, একবার তার গবর নিয়ে আয় গে। সুরঙ্গমা । কোথায় তার খবর নেব তা তো কিছুই জানি নে । ঠাকুরদাকে ডাকতে পাঠিয়েছি—তিনি এলে হয়তো তার কাছ থেকে সংবাদ পাওয়া যাবে। ঠাকুরদার প্রবেশ সুদৰ্শন । শুনেছি তুমি আমার রাজার বন্ধু—আমার প্রণাম গ্রহণ করে, আমাকে আশীৰ্বাদ করে ।