পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩০ রবীন্দ্র-রচনাবলী ঠাকুরদা। লোকের ওই দশা বটে। যা দেখে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায় তাই দেখেই বদররা হাসে । কাঞ্চী । কিন্তু ঠাকুরদা, তোমার এ কী কাণ্ড ! সেই উংসবের ছেলেদের এখানেও জুটিয়ে এনেছ ? কিন্তু সেখানে যারা তোমার পিছে পিছে ঘুরত তাদের দেখছি নে বড়ে । ঠাকুরদা। আমার শম্ভূ-স্বধনের দল ? তারা এবার লড়াইয়ে মরেছে। কাঞ্চী । মরেছে ? ঠাকুরদা । ই, তারা আমাকে বললে, ঠাকুরদা, পণ্ডিতরা যা বলে আমরা কিছুই বুঝতে পারি নে, তুমি যে গান গাও তার সঙ্গেও গলা মেলাতে পারি নে, কিন্তু একটা কাজ আমরা করতে পারি, আমরা মরতে পারি—আমাদের যুদ্ধে নিয়ে যাও, জীবনট সার্থক করে আসি । তা যেমন কথা তেমন কাজ । সকলের আগে গিয়ে তার দাড়াল, সকলের আগেই তারা প্রাণ দিয়ে বসে আছে । কাঞ্চী । সিধে রাস্ত ধরে সব বুদ্ধিমানদের চেয়ে এগিয়ে গেল আর কি, এপন এই ছেলের দল নিয়ে কী বাল্যলীলাটা চলছে ? ঠাকুরদা। এবারকার বসন্ত-উংসবট। নানাক্ষেত্রে নানারকম হয়ে গেল, তাই সকল পালার মধ্যে দিয়ে এদের ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। সেদিন বাগানের মধ্যে দিয়ে দিব্যি লাল হয়ে উঠেছিল—রণক্ষেত্রেও মন্দ জমে নি। সে তো চুকল, আজ আবার আমাদের বড়ো রাস্তার বড়োদিন । আজ ঘরের মাতুষদের পথে বের করবার জন্যে দক্ষিণ হাওয়ার মতো দলবল নিয়ে বেরিয়েছি। ধর তো রে ভাই ; তোদের সেই দরজায় ঘা দেবার গানটা ধর । গান আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে । তব অবগুষ্ঠিত কুষ্ঠিত জীবনে, ক’রো না বিড়ম্বিত তারে । আজি খুলিয়ে হৃদয়-দল খুলিয়ে, আজি ভুলিয়ে আপন পর ভুলিয়ো, এই সংগীত-মুখরিত গগনে তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ে । এই বাহির ভূবনে দিশা হারায়ে দিয়ে ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।