পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

උXLV wo রবীন্দ্র-রচনাবলী অমিতর বুকের কাছ থেকে লাবণ্য মৃদুস্বরে বললে, “চলে এবার।” কেমন তার মনে হল এইখানে শেষ করা ভালো । অমিত সেটা বুঝলে, কিছু বললে না। লাবণ্যর মুখ বুকের উপর একবার চেপে ধরে ফেরবার পথে খুব ধীরে ধীরে চলল। বললে, “কাল সকালেই আমাকে ছাড়তে হবে, তার আগে আর দেখা করতে আসব না।” “কেন আসবে না ?” “আজ ঠিক জায়গায় আমাদের শিলঙ পাহাড়ের অধ্যায়টি এসে থামল—ইতি প্রথম: সগঃ, আমাদের সয়ে বয়ে স্বৰ্গ ।” 鬱 লাবণ্য কিছু বললে না, অমিতর হাত ধরে চলল। বুকের ভিতর আনন্দ, আর তারই সঙ্গে সঙ্গে একটা কান্না স্তব্ধ হয়ে আছে । মনে হল জীবনে কোনোদিন এমন নিবিড় করে অভাবনীয়কে এত কাছে পাওয়া যাবে না। পরমক্ষণে শুভদৃষ্টি হল, এর পরে আর কি বাসরঘর আছে ? রইল কেবল মিলন আর বিদায় একত্র মিশিয়ে একটি শেষ প্রণাম । ভারি ইচ্ছে করতে লাগল অমিতকে এখনই সেই প্রণামটি করে, বলে, তুমি আমাকে ধন্য করেছ। কিন্তু সে আর হল না । বাসার কাছাকাছি আসতেই অমিত বললে, “বন্যা, আজ তোমার শেষ কথাটি একটি কবিতায় বলে, তাহলে সেট মনে করে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। তোমার নিজের যা মনে আছে এমন একটা কিছু আমাকে শুনিয়ে দাও।” লাবণ্য একটুখানি ভেবে আবৃত্তি করলে— “তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেন্থ রাপি' রজনীর শুভ্র অবসানে। কিছু আর নাই বাকি, নাইকে প্রার্থন, নাই প্রতি মুহূর্তের দৈন্তরাশি, নাই অভিমান, নাই দীন কাল্প, নাই গর্ব হাসি, নাই পিছু ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালিধানি, ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহং মৃত্যু আনি ।” “বন্ত, বড়ো অন্যায় করলে। আজকের দিনে তোমার মুখে বলবার কথা এ নয়, কিছুতেই নয়। কেন এটা তোমার মনে এল ? তোমার এ কবিতা এখনই ফিরিয়ে নাও।” “ভয় কিসের মিতা ? এই আগুনে-পোড়া প্রেম, এ সুখের দাবি করে না, এ নিজে । মুক্ত বলেই মুক্তি দেয়, এর পিছনে ক্লাস্তি আসে না, মানত আসে ন—এর চেয়ে আর কিছু কি দেবার আছে ?” । *