পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ാ@് রবীন্দ্র রচনাবলী বুঝলেন এদের কাছে মান রাধা শক্ত হবে। এক মুহূর্তে মাসিত্ব পরিহার করে বললেন, “শুনেছি অমিতবাৰু আপনাদের হোটেলেই থাকেন, তার খবর আপনাদেরই জানা আছে।" কেটি বেশ একটু স্পষ্ট করেই হাসলে। তাকে ভাষায় বললে বোঝায়, "লুকোতে ' পার, ফাকি দিতে পারবে না ।" .جی.پی আসল কথা, গোড়াতেই লাবণ্যকে দেখে এবং অমিকে সে চেনে না শুনে কেটি মনে-মনে আগুন হয়ে আছে। কিন্তু সিসির মনে আশঙ্কা আছে মাত্র, জালা নেই ; যোগমায়ার সুন্দর মুখের গাম্ভীর্ষ তার মনকে টেনেছিল। তাই, যখন দেখলে কেটি তাকে স্পষ্ট অবজ্ঞা দেখিয়ে চৌকি ছাড়লে না, তার মনে কেমন সংকোচ লাগল। অথচ কোনো বিষয়ে কেটির বিরুদ্ধে যেতে সাহস হয় না, কেননা, কেটি সিডিশন দমন করতে ক্ষিপ্ৰহস্ত,—একটু সে বিরোধ সয় না। কর্কশ ব্যবহারে তার কোনো সংকোচ নেই। অধিকাংশ মানুষই ভীরু, অকুষ্ঠিত দুর্ব্যবহারের কাছে তার হার মানে । নিজের অজস্র কঠোরতায় কেটির একটা গৰ্ব আছে ; যাকে সে মিষ্টিমুখে ভালোমাঙ্কুযি বলে, বন্ধুদের মধ্যে তার কোনো লক্ষণ দেখলে তাকে সে অস্থির করে তোলে । রূঢ়তাকে সে অকপটতা বলে বড়াই করে, এই রূঢ়তার আঘাতে যারা সংকুচিত তারা কোনোমতে কেটিকে প্রসন্ন রাখতে পারলে আরাম পায় । সিসি সেই দলের,—সে কেটিকে মনে-মনে যতই ভয় করে ততই তার নকল করে, দেখাতে যায় সে দুর্বল নয় । সব সময়ে পেরে ওঠে না । কেটি আজ বুঝেছিল যে, তার ব্যবহারের বিরুদ্ধে সিসির মনের কোণে একটা মুখচোরা আপত্তি লুকিয়ে ছিল। তাই সে ঠিক করেছিল, যোগমায়ার সামনে সিসির এই সংকোচ কড়া ক'রে ভাঙতে হবে । চৌকি থেকে উঠল, একটা সিগারেট নিয়ে সিসির মুখে বসিয়ে দিলে, নিজের ধরানো সিগারেট মুখে করেই সিসির সিগারেট ধরাবার জন্যে মুখ এগিয়ে নিয়ে এল। প্রত্যাখ্যান করতে সিসি সাহস করলে না। কানের ডগাটা একটুখানি লাল হয়ে উঠল। তবু জোর করে এমনি একটা ভাব দেখালে, যেন তাদের হাল পাশ্চাত্যিকতায় যাদের ভ্রু এতটুকু কুঞ্চিত হবে তাদের মুখের উপর ও তুড়ি মারতে প্রস্তুত—that much for it ! ঠিক সেই সময়টাতে অমিত এসে উপস্থিত। মেয়ের তো অবাক। হোটেল থেকে যখন সে বেরিয়ে এল মাথায় ছিল ফেন্ট হাট, গায়ে ছিল বিলিতি কোর্তা । এখানে দেখা যাচ্ছে পরনে তার ধুতি আর শাল। এই বেশাস্তরের আজ্ঞা ছিল তার সেই কুটিরে। সেইখানে আছে একটি বইয়ের শেলফ, একটি কাপড়ের তোরঙ্গ, আর যোগমায়ার দেওয়া একটি আরামকেদার। হোটেল থেকে মধ্যাহ্নভোজন সেরে