পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা రిఅరి অহংকার ভাঙল,—এবারকার মতো আমার রেস ফুরোল, আমারই হার । মনে হচ্ছে অমিটকে আর রাজি করতে পারব না। তা এমন অদ্ভূত করেই যদি হারাবে সেদিন এত আদরে আংটি দিয়েছিলে কেন ? সে-দেওয়ার মধ্যে কি কোনো বাধন ছিল না ? এই দেওয়ার মধ্যে কি কথা ছিল না যে, আমার অপমান কোনোদিন তুমি ঘটতে দেবে না ?” বলতে বলতে কেটির গলা ভার হয়ে এল, অনেক কষ্টে চোখের জল সামলে নিলে । আজ সাত বংসর হয়ে গেল, কেটির বয়স তখন আঠারো । সেদিন এই আংটি অমিত নিজের আঙুল থেকে খুলে ওকে পরিয়ে দিয়েছিল। তখন ওরা দুজনেই ছিল ইংলণ্ডে । অক্সফোর্ডে একজন পাঞ্জাবি যুবক ছিল কেটির প্রণয়মুগ্ধ। সেদিন আপসে অমিত সেই পাঞ্জাবির সঙ্গে নদীতে বাচ খেলেছিল। অমিতরই হল জিত। জুন মাসের জ্যোংস্নায় সমস্ত আকাশ যেন কথা বলে উঠেছিল, মাঠে মাঠে ফুলের প্রচুর বৈচিত্র্যে ধরণী তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে । সেইক্ষণে অমিত কেটির হাতে আংটি পরিয়ে দিলে, তার মধ্যে অনেক কথাই উহ্ন ছিল কিন্তু কোনো কথাই গোপন ছিল না । সেদিন কেটির মুখে প্রসাধনের প্রলেপ লাগে নি, তার হাসিটি সহজ ছিল, ভাবের আবেগে তার মুখ রক্রিম হতে বাধা পেত না । আংটি হাতে পরা হলে অমিত তার কানে কানে বলেছিল— C Tender is the night And haply the queen moon is on her throne. কেটি তখন বেশি কথা বলতে শেখে নি। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কেবল যেন মনে-মনে বলেছিল, “মন আমী,” ফরাসি ভাষায় যার মানে হচ্ছে, বঁধু। আজ অমিতর মুখেও জবাব বেধে গেল। ভেবে পেলে না, কী বলবে । কেটি বললে, “বাজিতে যদিই হারলুম তবে আমার এই চিরদিনের হারের চিহ্ন তোমার কাছেই থাক, অমিট। আমার হাতে রেখে একে আমি মিথ্যে কথা বলতে দেব না ।” বলে আংটি খুলে টেবিলটার উপর রেখেই দ্রুতবেগে চলে গেল। এনামেল-করা মুখের উপর দিয়ে দরদর করে চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।