পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেবের কবিতা \లు4 লাবণ্য সহজেই বললে, “চলে ।” দুজনে বেরোল। অমিত কিছু দ্বিধার সঙ্গেই লাবণ্যর হাতটিকে হাতের মধ্যে নেবার চেষ্টা করলে। লাবণ্য একটুও বাধা না দিয়ে হাত ধরতে দিলে। অমিত হাতটি একটু জোরে চেপে ধরলে তাতেই মনের কথা যেটুকু ব্যক্ত হয় তার বেশি কিছু মুখে এল না। চলতে চলতে সেদিনকার সেই জায়গাতে এল যেখানে বনের মধ্যে হঠাৎ একটুখানি ফাক। একটি তরুশূন্ত পাহাড়ের শিখরের উপর স্বৰ্ষ আপনার শেষ স্পর্শ ঠেকিয়ে নেমে গেল। অতিমুকুমার সবুজের আভা আন্তে আস্তে মুকোমল নীলে গেল মিলিয়ে । দুজনে থেমে সেইদিকে মুখ করে দাড়িয়ে রইল । লাবণ্য আস্তে আস্তে বললে, “একদিন একজনকে যে-আংটি পরিয়েছিলে আমাকে দিয়ে আজ সে-আংটি খোলালে কেন ?" অমিত ব্যথিত হয়ে বললে, “তোমাকে সব কথা বোঝাব কেমন করে, বন্যা । সেদিন যাকে আংটি পরিয়েছিলুম, আর যে আজ সেটা খুলে দিলে তারা দুজনে কি একই মানুষ ?” ki লাবণ্য বললে, “তাদের মধ্যে একজন স্ফটিকর্তার আদরে তৈরি, আর একজন তোমার অনাদরে গড়া ।” অমিত বললে, “কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। বে-আধাতে আজকের কেটি তৈরি তার দায়িত্ব কেবল আমার একলার নয় ।” “কিন্তু, মিতা, নিজেকে যে একদিন সম্পূর্ণ তোমার হাতে উংসর্গ করেছিল, তাকে তুমি আপনার করে রাখলে না কেন ? ষে-কারণেই হ'ক আগে তোমার মুঠে আলগা হয়েছে তার পরে দশের মুঠোর চাপ পড়েছে ওর উপরে, ওর মৃতি গেছে বদলে । তোমার মন একদিন হারিয়েছে বলেই দশের মনের মতো করে নিজেকে সাজাতে বসল। আজ তো দেখি ও বিলিতি দোকানের পুতুলের মতো ; সেটা সম্ভব হত না, যদি ওর হৃদয় বেঁচে থাকত। খাক গে ও-সব কথা । তোমার কাছে জামার একটা প্রার্থনা আছে। রাখতে হবে ।” "বলো, নিশ্চয় রাখব।" . بن “অন্তত হস্তাখানেকের জন্তে তোমার দলকে নিয়ে ভূমি চেৰাপুঞ্জিতে বেড়িয়ে এস। ওকে আনন্দ দিতে নাও যদি পার ওকে আমোদ দিতে পারবে ।” অমিত একটুখানি চুপ করে থেকে বললে, “আচ্ছা।” তার পরে লাবণ্য অমিতর বুকে মাৰা রেখে বললে, “একটা কথা তোমাকে বলি, মিতা, আর কোনোদিন বলব না । তোমার সঙ্গে আমার যে-অস্তরের সম্বন্ধ তা নিয়ে