পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8) e রবীন্দ্র-রচনাবলী হইতে থাকিবে । ইহাতে আমাদের বলবান ইংরেজগণ বিফল গাত্রদাহে যতই অধীর হইয়া উঠিবে আমাদের উৎসাহ এবং উদ্যমের আবশ্বকতা ততই আরও বাড়াইয়া তুলিবে মাত্র। УNDo o { অপমানের প্রতিকার একদ কোনো উচ্চপদস্থ বাঙালি গবর্মেন্ট-কর্মচারীর বাড়িতে কোনো কলেজের ইংরেজ অধ্যক্ষ নিমন্ত্রিত হইয়াছিলেন। তখন জুরি-দমন বিল লইয়া দেশে একটা আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল । আহারান্তে নিমন্ত্রিত মহিলাগণ পাশ্ববর্তী গৃহে উঠিয়া গেলে প্রসঙ্গক্রমে জুরি প্রথার কথা উঠিল। ইংরেজ প্রোফেসর কহিলেন, যে-দেশের লোক অধসভ্য, অর্ধশিক্ষিত, যাহাদের ধর্মনীতির আদর্শ উন্নত নহে, জুরির অধিকার তাহাদের হস্তে কুফল প্রসব করে । শুনিয়া এই কথা মনে করিলাম, ইংরেজ এত অধিক সভ্য হইয়াছে যে, আমাদের সহিত সভ্যতা রক্ষা সে বাহুল্য জ্ঞান করে । আমাদের নৈতিক আদর্শ কত মাত্রা উঠিয়াছে অথবা নামিয়াছে জানি না, কিন্তু ইহা জানি, র্যাহার আতিথ্য ভোগ করিতেছি তাহার স্বজাতিকে পরুষবাক্যে অবমাননা করা আমাদের শিষ্টনীতির আদশের অনেক বাহিরে । অধ্যাপক মহাশয় আর-একটি কথা বলিয়াছিলেন, যে-কথা কেবলমাত্র অমিষ্ট ও অশিষ্ট নহে পরস্তু ইংরেজের মুপে অত্যন্ত অসংগত শুনিতে হইয়াছিল। তিনি বলিয়াছিলেন, জীবনের পবিত্রতা, অর্থাং জীবনের প্রতি হস্তক্ষেপ করার পরমদূষণীয়তা সম্বন্ধে ভারতবাসীর ধারণ ইংরেজের তুলনায় অত্যন্ত স্বল্পপরিমিত । সেইজন্য হত্যাকারীর প্রতি ভারতবর্ষীয় জুরির মনে যথোচিত বিদ্বেষের উদ্রেক হয় না। যাহারা মাংসাশী জাতি এবং যাহারা বিরাট হত্যাকাণ্ডের দ্বারা পৃথিবীর দুই নবাবিষ্কৃত মহাদেশের মধ্যে আপনাদের বাসযোগ্য স্থান পরিষ্কার করিয়া লইয়াছে, এবং সম্প্রতি তরবারির দ্বারা তৃতীয় মহাদেশের প্রচ্ছন্ন বক্ষোদেশ অল্পে অল্পে বিদীর্ণ করিয়া তাহার শস্ত-অংশটুকু মুখে ভক্ষণ করিবার উপক্রম করিতেছে তাহার। যদি নিমন্ত্রণসভায় আরামে ও স্পর্ধাভরে নৈতিক আদশের উচ্চ দণ্ডে চড়িয়া বসিয়া জীবনের