পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૨8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কণ্ঠরোধ সিডিশন বিল পাস হইবার পূর্ব দিলে টাউনহলে পঠিত অদ্য আমি যে-ভাষায় প্রবন্ধ পাঠ করিতে উষ্ঠত হইয়াছি তাহা যদিও বাঙালির ভাষা, দুর্বলের ভাষা, বিজিত জাতির ভাষা তথাপি সে-ভাষাকে আমাদের কর্তৃপক্ষের ভয় করিয়া থাকেন। তাহার একটি কারণ, এ-ভাষা তাহারা জানেন না । এবং যেখানেই অজ্ঞানের অন্ধকার সেইখানেই অন্ধ আশঙ্কার প্রেতভূমি । কারণ যাহাই হউক না কেন যে-ভাষা আমাদের শাসনকর্তারা জানেন না, এবং ষে-ভাষাকে তাহার মৰ্মে মনে ভয় করেন সে-ভাষায় তাহাদিগকে সম্ভাষণ করিতে আমি ততোধিক ভয় করি । কেননা আমরা কোন ভাব হইতে কী কথা বলিতেছি, আমাদের কথাগুলি সুদুঃসহ বেদন হইতে উচ্ছ্বসিত, না দুর্বিষহ স্পর্ধ হইতে উদ্ধৃগিরিত তাহার বিচারের ভার তাহাদেরই হস্তে, এবং তাহার বিচারের ফল নিতান্ত সামান্ত নহে । আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নিবোধও মহি। উদ্যত রাজদ গুপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমুতু্যর ইচ্ছাও আমার নাই ; কিন্তু আমাদের রাজকীয় দণ্ডধারী পুরুষটি ভাষার ঠিক কোন সীমানায় ঘাটি বাধিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছেন তাহা আমি স্পষ্টরূপে জানি না,—এবং আমি ঠিক কোনখানে পদার্পণ করিলে শাসনকর্তার লগুড় আসিয়া আমাকে ভূমিশায়ী করিবে তাহ কর্তার নিকটও অস্পষ্ট,—কারণ, কর্তার নিকট আমার ভাষা অস্পষ্ট, আমিও নিরতিশয় অস্পষ্ট, সুতরাং স্বভাবতই তাহার শাসনদ ও আনুমানিক আশঙ্কাবেগে অন্ধভাবে পরিচালিত হইয়া দণ্ডবিধির ন্যায়সীমা উল্লঙ্ঘনপূর্বক আকস্মিক উদ্ধাপাতের ন্যায় অযথাস্থানে দুর্বলজাবের অস্তৱিস্ক্রিয়কে অসময়ে সচকিত করিয়া তুলিতে পারে। এমনস্থলে সর্বতোভাবে মূক হইয়া থাকাই সুবুদ্ধির কাজ, এবং আমাদের এই দুর্ভাগ্য দেশে অনেকেই কর্তব্যক্ষেত্র হইতে যথেষ্ট দূরে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া সেই নিরাপদ সদবুদ্ধি অবলম্বন করিবেন তাহারও দুই-একটা লক্ষণ এখন হইতে দেখা যাইতেছে,—আমাদের দেশের বিক্রমশালী বাঙ্গী যাহারা বিলাতি সিংহনাদে শ্বেতদ্বৈপায়নগণের চিত্তেও সহসা বিভ্রম উৎপাদন করিতে পারেন র্তাহাদের অনেকে বিবর আশ্রয় করিয়া বাগরোধ অভ্যাস করিতে বসিবেন দেশের এমন একটা দুঃসময় আসন্ন ;–সে-সময়ে দুর্ভাগ্য দেশের নির্বাক বেদন নিবেদন করিতে রাজদ্বারে অগ্রসর হইবে এমন দুঃসাহসিক দেশবন্ধু দুর্লভ হইয়া পড়িবে। যদিচ শাস্ত্রে আছে